—ফাইল চিত্র।
অবশেষে ফাঁসি হল ইয়াকুবের। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে নাগপুর জেলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির পর ২ মিনিটের নীরবতাও পালন করা হয়। বিমানে তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মু্ম্বইয়ের বাড়িতে।
এ দিন ইয়াকুবের ফাঁসি ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য মুম্বইয়ে তার বাড়ি ঘিরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কড়া সতর্কতা রয়েছে দেশজুড়ে।
সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর বুধবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও ইয়াকুব মেমনের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেন। একই রায়ের পুনরাবৃত্তি হয় গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়েও। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য পূর্বনির্ধারিত সময়সীমাই বহাল থাকে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার মধ্যেই ফাঁসির নির্দেশ দেন বিচারপতি। স্থান, নাগপুর জেল। নিজের ৫৪তম জন্মদিনেই ফাঁসির দড়ি রইল ইয়াকুব মেমনের ভাগ্যে।
ইয়াকুবের ফাঁসির সময় ঠিক হয়েছিল বৃহস্পতিবার সাত সকাল। দিনভর নাটক এবং একের পর এক আর্জি খারিজের পরে মেমনের ফাঁসি অন্তত চোদ্দো দিন স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তার পক্ষের আইনজীবীরা। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করতে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে রাত আড়াইটেয় খোলা হল সুপ্রিম কোর্ট। শুনানি শুরু হল তারও এক ঘণ্টা পরে। সেই শুনানিতেই ইয়াকুবের আর্জি খারিজ করে দেয় ওই বেঞ্চ। বিচারপতিদের রায় বেরনোর পরই ঠিক হয়ে যায়, আজ ইয়াকুবের জীবনের শেষ দিন।
তার ফাঁসির আগে রাজধানী দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ সারা দেশেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বুধবারই বিকেল ৪টে নাগাদ ইয়াকুবের ফাঁসি স্থগিতের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। ইয়াকুব প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও। সুপ্রিম কোর্টের রায় জানার পরে আর্জি বিবেচনা করতে বসে ফের কেন্দ্রের মতামত জানতে চান প্রণববাবু। রাইসিনা হিলসে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়ে দেন, সরকার ফাঁসির পক্ষে। রাত পৌনে ১১টায় জানা যায়, ইয়াকুবের আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু এ সবের মধ্যেই নতুন করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় ইয়াকুব। এ বার তার আর্জি, ফাঁসি অন্তত১৪ দিন পিছিয়ে দেওয়া হোক। তা ছাড়া মহারাষ্ট্রের জেল ম্যানুয়ালেও আছে, কোনও আসামির প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো যায় না। রাত সাড়ে ১২টায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে জড়ো হয় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ-সহ মৃত্যুদণ্ড-বিরোধী সমাজকর্মীদের একটি দল। কিছু পরে জানা যায়, যে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ বিকেলে ইয়াকুবের আর্জি খারিজ করেছিল, বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং বিচারপতি পি সি পন্থকে নিয়ে গঠিত সেই একই বেঞ্চ রাতে় মামলাটি শুনবে। খোলা হয় সুপ্রিম কোর্টের চার নম্বর আদালত কক্ষ। ফটকের সামনে জড়ো হওয়া ভিড়ের মধ্যে দিয়ে কোনও মতে রাস্তা করে ঢুকতে থাকে বিচারপতিদের গাড়ি। কেউ কেউ বলছেন, কোর্ট বন্ধ হওয়ার পর রাতে বিচারপতিদের বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির নজির আগেও রয়েছে। কিন্তু গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্ট খুলিয়ে মামলার নজির সম্ভবত নেই।
সম্প্রতি ইয়াকুবের অন্তিম আবেদন বা কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেই আবেদন নিয়ম মেনে শোনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে গত কাল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির মধ্যেই মতপার্থক্য তৈরি হয়। তখন মামলা শুনতে তিন বিচারপতির নতুন বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন সেই বেঞ্চই আজ বিকেলে বলেছিল, ‘‘প্রাণদণ্ডের আদেশ নির্ভুল। এতে কোনও আইনি ত্রুটি নেই।’’ এমনকী কিউরেটিভ পিটিশনের শুনানির প্রসঙ্গ টেনেও আজ বিচারপতিরা বলেন, ‘‘যেখানে তিন জন প্রবীণতম বিচারপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানে কোনও ভুল ধরা যায় না।’’
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরেই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়ে দেন, ‘‘রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলবে।’’ ইয়াকুবের ফের রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি আদালতেই বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদনের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি হবে না, এমনটা বাস্তবে সম্ভব নয়। তা হলে কোনও দণ্ডিত অপরাধী রোজই প্রাণভিক্ষার আবেদন করবে। অবশ্য এর পরেই রাষ্ট্রপতি ভবন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে মতামত জানতে চায়। রাজনাথ যখন রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ছেন, তখন রাত ১১টা বাজতে বেশি দেরি নেই।
ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার আবেদন অবশ্য গত বছরেই খারিজ করে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। দিনটা ছিল ২০১৪-র ১১ এপ্রিল। ২৬ মে ইয়াকুবকে সে খবর জানানো হয়। আজ ইয়াকুবের আইনজীবী রাজু রামচন্দ্রন সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তোলেন, রাষ্ট্রপতি যখন প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করছেন, তখনও ইয়াকুবের সামনে সমস্ত আইনি পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল টাডা কোর্ট প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেওয়ার সময়ে ইয়াকুবের বক্তব্য শোনেনি। ৩০ জুলাই যে ফাঁসি হবে, তা ইয়াকুবকে ১৩ জুলাই জানানো হয়েছিল। এর পর আদালতে অন্তিম আবেদন করা হয়। তা খারিজ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যপালের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানো হয়। একই সঙ্গে নতুন করে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করা হয়। ইয়াকুবের আইনজীবীর বক্তব্য, প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ ও ফাঁসির দিনের মাঝখানে ১৪ দিন সময় থাকা দরকার। এই সময়ে অপরাধী ফাঁসির জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে পারে। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে পারে। সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারায় উইল করে যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সময়টুকুও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy