জীবিত শ্রমিক মধ্যপ্রদেশের সরকারি প্রকল্পের খাতায় ‘মৃত’। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দিব্যি বেঁচে আছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কাজও করছেন বহাল তবিয়তে। কিন্তু রাজ্যের সরকারি প্রকল্পে তাঁরা ‘মৃত’! শুধু তা-ই নয় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে তাঁদের সরকারি ক্ষতিপূরণও কেউ কেউ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-তে সম্প্রচারিত একটি শোতে দেখানো কিছু নথিতে মধ্যপ্রদেশের এই ‘দুর্নীতি’র কথা প্রকাশ করা হয়েছে।
‘মধ্যপ্রদেশ বিল্ডিং এবং অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড’-এর মৃতদের নামের তালিকায় ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে। এই বোর্ডের একটি প্রকল্পে বলা হয়েছে কর্মক্ষেত্র বা দুর্ঘটনায় এক জন শ্রমিক মারা গেলে তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার কারণে যদি কোনও শ্রমিকের অঙ্গহানি হয় বা শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়, তবে সেই শ্রমিকও ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এই সব ক্ষতিপূরণ যাঁদের দেওয়া হয়েছে তাঁদের নামের একটি তালিকা রয়েছে বোর্ডের। সেই তালিকায় নাম থাকা কয়েক জন শ্রমিককে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, অনেক শ্রমিক আছেন, যাঁরা এখনও রাজ্যের রাজধানী ভোপালে কাজ করছেন, তাঁদের কাগজে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ, কিছু সরকারি আধিকারিক নাকি সেই সব শ্রমিকদের নামে ‘জাল অ্যাকাউন্ট’ খুলে নিজেদের ‘যোগ্য’ হিসাবে দাবি করে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নথিতে জানা গিয়েছে, মৃতের তালিকায় থাকায় অন্তত ১১ জন এখনও জীবিত রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঊর্মিলা রাইকওয়ার নামে এক মহিলা আছেন। তালিকায় তিনি তাঁর নাম দেখে হতবাক। সেখানে বলা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন মাসে ঊর্মিলার ‘মৃত্যু’ হয়েছে। এমনকি তাঁর পরিবার নাকি দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও পেয়েছে। যদিও ঊর্মিলা দাবি করেন যে, তিনি বা তাঁর পরিবার কোনও টাকা পাননি।
এনডিটিভি-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভোপালের চাঁদবাদের বাসিন্দা ঊর্মিলা বলেন, ‘‘এই কাগজে (মৃতের তালিকা) বলছে আমি মারা গিয়েছি। কিন্তু আমি তো বেঁচে আছি। আমার মৃত্যুর পর আমার সন্তানদের টাকা পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কেউ কোনও টাকা পায়নি।’’
চাঁদবাদ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে বসবাসকারী মহম্মদ কামারের অবস্থাও ঊর্মিলার মতোই। তাঁর ‘মৃত্যু’ও খাতায়কলমে ২০২৩ সালের জুন মাসে দেখানো হয়েছে। মহম্মদ বলে, ‘‘আমি মারা গিয়েছি আর আমি টাকা নিয়েছি, কাগজে এমন কথাই বলা হয়েছে। যা দেখে আমি হতবাক এবং বিস্মিত। এই অনিয়ম নিয়ে আমি অভিযোগ দায়ের করব।’’
কল্যাণ বোর্ড শ্রমিকদের মেয়েদের বিবাহের জন্য ৫১ হাজার টাকা সাহায্য করে। মহম্মদের কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগে আমি আমার মেয়ের বিয়ের জন্য এই টাকার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একটা টাকাও পাইনি। তবে দেখানো হয়েছে আমি নাকি সেই টাকা তুলেছি।’’
এই সংক্রান্ত ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ভূরি ভূরি। সরকার এই ব্যাপারে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। এনডিটিভি-কে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্ল বলেন, ‘‘যদি কোথাও এমন জালিয়াতি হয়ে থাকে, তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের সরকার কখনওই এই সব কাজ বরদাস্ত করবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy