—ফাইল চিত্র।
আরও একবার শোনা গেল কঠোর বার্তাটা আজ। দলিত নিগ্রহ, সংখ্যালঘু নিগ্রহের বিরুদ্ধে আরও স্পষ্ট উচ্চারণে রবিবার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের কোণে কোণে চারিয়ে গেল সেই কন্ঠস্বর। সংশয় নেই, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের এ যাবৎ মেয়াদে সমাজের দুর্বল শ্রেণির উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ বারের উচ্চারণটাই ছিল সবচেয়ে স্পষ্ট এবং সবচেয়ে বলিষ্ঠ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর এই কন্ঠস্বরে, এই উচ্চারণে একটা কৌশলের সুপ্তিও টের পাওয়া গেল যেন। প্রধানমন্ত্রী সাপটা মারতে চাইলেন, কিন্তু লাঠিটা যাতে না ভাঙে, সে বিষয়ে যারপরনাই সতর্ক রইলেন।
আসল-নকল তত্ত্ব হাজির করলেন প্রধানমন্ত্রী। যে গো-রক্ষা কর্মসূচিকে ঘিরে এত উত্তেজনা দেশজুড়ে, এত হানাহানি, এত রক্তপাত, এত আর্তনাদ, সেই গো-রক্ষা কর্মসূচিকে আদ্যন্ত অপ্রয়োজনীয় এবং অবান্তর বলার সাহস প্রধানমন্ত্রী দেখালেন না। দলিতকে মার খেতে দেওয়ার আগে, আঘাত নিজের বুকে সয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করলেন ঠিকই। কিন্তু গো-রক্ষকদের মধ্যে ‘আসল’ আর ‘নকল’-এর ভেদরেখা টেনে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, গো-রক্ষা কর্মসূচি থেকে সরতে রাজি নন তিনি। দলিতের মনে যে অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে, সংখ্যালঘুকে যে আতঙ্ক গ্রাস করেছে, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি যে ভাবে বিশ্বাস হারাচ্ছে তাঁর সরকারের উপর থেকে, তা নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগের। জনসমর্থনের ক্রমক্ষীয়মান ভিতটা ধরে রাখতে তিনি সচেষ্ট হলেন। তার জন্য দলিত মনের আগুন নেভানো সর্বাগ্রে জরুরি। দলিত নিগ্রহের বিরুদ্ধে এ যাবৎ কঠোরতম শব্দ প্রয়োগ করে সেই চেষ্টাই করলেন সর্বাগ্রে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারকে অপ্রীত করার ঝুঁকিও মোদী নিতে চাইলেন না। তাই গো-রক্ষা কর্মসূচি বন্ধ করার ডাক দিলেন না। কখনও মহাত্মা গাঁধী, কখনও বিনোবা ভাবের আশ্রয় নিয়ে গো-রক্ষা কর্মসূচির সারবত্তা প্রমাণের চেষ্টা করলেন। ‘নকল’ গো-রক্ষকদের একঘরে করার ডাক দিলেন। ‘আসল’ গো-রক্ষকদের প্রতি নিজের গভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করলেন। দলিতের মনের আগুন নেভাতে গিয়ে সঙ্ঘের রোষানলে যাতে আহূতি না পড়ে, সে বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী অত্যন্ত যত্নবান রইলেন।
উদ্দেশ্য কি সাধিত হল আদৌ? যে বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের শিরায় শিরায়, গো-রক্ষা কর্মসূচি নামক সাপটার আদ্যন্ত বিনাশ না ঘটালে কি সে বিষের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে? আর বিষের জ্বালা যদি কমানো না যায়, তা হলে দলিত হৃদয়ে ঠাঁই পাকা করার বাসনাটা কি কোনও ভাবে পূর্ণ হবে?
নরেন্দ্র মোদী কৌশল একটা করলেন ঠিকই। সাপ যাতে মরে এবং লাঠিটা যাতে অক্ষত থাকে, সেই চেষ্টাই করলেন। লাঠি হয়তো তিনি অক্ষতই রাখলেন। কিন্তু সাপটা মরল কই? দুর্বলের উপরে অত্যাচার রুখতে সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাতে বিষের জ্বালাটা জুড়োল কই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy