স্ত্রীকে নিয়ে মহাকুম্ভে যান। ত্রিবেণি সঙ্গমে স্নান করা তো বটেই, প্রয়াগরাজের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান দম্পতি। ছবি তোলেন। তা আবার সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন তাঁরা। দেখে মনেই হবে, সুখী দম্পতি! কিন্তু এত কিছুর নেপথ্যে যে অন্য কারণ লুকিয়ে, তা ধরতেই পারেননি স্ত্রী। পরের দিন হোটেলের ঘরে তাঁর গলাকাটা দেহ উদ্ধারের পরই প্রকাশ্যে আসে পুরো ঘটনা। ধরা পড়তেই পুলিশি জেরায় স্ত্রীকে খুন করার কথা স্বীকার করেন দিল্লির ত্রিলোকপুরীর বাসিন্দা অশোক কুমার!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কুম্ভে যান অশোক। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, পুণ্যস্নান সেরে আশপাশের স্থানগুলি দর্শন করে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু যে দিন বাড়ি ফেরার কথা, তার আগেই ফিরে যান অশোক। সঙ্গে ছিলেন না স্ত্রী। বাড়ির লোক জিজ্ঞাসা করায় জানান, মহাকুম্ভে হারিয়ে গিয়েছেন! অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লাভ হয়নি। শেষে থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন বলে বাড়ির লোককে জানান অশোক। তবে বাবার কথা বিশ্বাস হয়নি পুত্রের। বিষয়টি তিনি তাঁর মামাকে জানান। দু’দিন কেটে গেলেও ওই মহিলার খোঁজ না মেলায় বাড়িতে উদ্বেগ বাড়ে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজ থেকে পুলিশের ফোন আসে কুমার পরিবারের কাছে। সেখানে তাঁদের আসতে বলা হয়। খবর পেয়েই প্রয়াগরাজে যান অশোকের শ্যালক। তাঁকে এক মহিলার দেহ শনাক্ত করার জন্য ডাকা হয়। সেখানে গিয়ে অশোকের শ্যালক দেখেন তাঁর দিদির দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হোটেল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। প্রয়াগরাজের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অভিষেক ভারতী জানিয়েছেন, যে হোটেলে অশোক উঠেছিলেন সেখানে কোনও প্রমাণপত্র দেননি। ওই হোটেল থেকেই ফোন করে জানানো হয়, এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনায় অশোককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
পুলিশি জেরায় অশোক খুনের কথা স্বীকার করেন। জানান কেন তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন। অশোক জানান, গত তিন মাস ধরে স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সেই সম্পর্কে থাকাকালীনই স্ত্রীকে কী ভাবে খুন করা যায়, তার ফন্দি আঁটতে থাকেন। ঠিক করেন মহাকুম্ভে নিয়ে গিয়ে সেখানেই তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে প্রয়াগরাজ যান। পুণ্যস্নান সেরে একটি হোটেলে ওঠেন। তবে সেখানে নিজেদের কোনও পরিচয়পত্র দেননি তাঁরা। রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা বাধে। তর্কাতর্কির মধ্যেই যখন ওই মহিলা বাথরুমে যান, তখন পিছন থেকে তাঁর উপর আক্রমণ করেন অশোক। ছুরি দিয়ে গলা কেটে রাতের অন্ধকারেই সকলের অলক্ষে হোটেল ছাড়েন। পরের দিন হোটেলের বাথরুমে ওই মহিলার গলা কাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন ম্যানেজার।