হাতে ৯০ দিন পড়ে পাওয়া সময়। তার মধ্যেই পুরো না হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার সঙ্গে অন্তত একটি ‘আংশিক’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বিভিন্ন দেশের উপরে বসানো চড়া আমদানি শুল্ক বুধবার ভারতীয় সময়ে গভীর রাতে আচমকাই ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই তিন মাসে আমেরিকাও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরে র সময় দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা আমেরিকায় আগামী বসন্তের সময় বা সেপ্টেম্বরে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের আশা ছিল, সেটা হলে শুল্কে কিছু রেহাই মিলবে। কিন্তু এখন ট্রাম্প নিজেই ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করায় বাণিজ্য মন্ত্রক তার মধ্যে আংশিক চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে।
মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘চুক্তি নিয়ে সবে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরে হলে, তা প্রথম ধাপের চুক্তি হত। জুলাইয়ের মধ্যে করতে হলে আংশিক হবে।’’ সূত্রের খবর, ভারত আমেরিকার একগুচ্ছ পণ্যে শুল্ক কমাতে রাজি। মূলত যেগুলি জরুরি নয়, কিংবা ভারতের কৃষক বা ছোট শিল্পের কাছে স্পর্শকাতর নয়, সেগুলির শুল্ক কমবে আংশিক চুক্তিতে। সরকারের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য নিশ্চিত নন ৯০ দিন পরে কী হবে। তখন ট্রাম্প কী করবেন, কেউ জানে না। তাই বাণিজ্য মন্ত্রকের লক্ষ্য আরও দু’টি— এক, ততদিনে ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি এগোনো। যাতে ট্রাম্প-নীতির ফলে আমেরিকায় রফতানি ধাক্কা খেলেও, ওই দুই জায়গায় বাণিজ্য বাড়িয়ে বিপদ কমানো যায়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এখন ব্রিটেনে। মূলত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যেই গিয়েছেন। দুই, চিন যাতে সস্তার পণ্য ভারতের বাজারে ছড়িয়ে দিতে না পারে, তার ব্যবস্থা। ট্রাম্প চিনের ক্ষেত্রে শুল্ক স্থগিত রাখেননি। উল্টে বাড়িয়ে ১২৫% করেছেন। ফলে আমেরিকায় চিনের রফতানি মার খেলে যাতে সেই পণ্য সস্তায় ভারতে পাঠাতে না পারে, সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা হবে।
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণা বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে ধাক্কা দিয়েছিল। প্রেসিডেন্টের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির ভিতর থেকেও তৈরি হয় চাপ। শুল্ক স্থগিতের অন্যতম কারণ এটা। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য মনে করেন, জাপান আমেরিকার বন্ড বিক্রি করে দিচ্ছিল। ফলে আমেরিকার সংস্থাগুলির কর্পোরেট বন্ড বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়। কার্যত স্তব্ধ হয় ঋণপত্রের বাজার। আমেরিকার বন্ডে সুদ বাড়ে। সেটাও কারণ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)