নরেন্দ্র মোদী সরকার আদিবাসী-বনবাসীদের উৎখাত করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। প্রতীকী ছবি।
বাঘ-সিংহকে জঙ্গল থেকে উৎখাত করার পর ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করারও তেমন দায় নেই। কিন্তু আদিবাসী, বনবাসীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পুনর্বাসনেরও বন্দোবস্ত করতে হয়। এই ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ছাড়াই জঙ্গলের জমিতে পরিকাঠামো তৈরির কাজ সহজ করতে, নরেন্দ্র মোদী সরকার আদিবাসী-বনবাসীদের উৎখাত করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১৬টি রাজ্যের ১০ লক্ষের বেশি আদিবাসী-বনবাসী পরিবার উচ্ছেদের আশঙ্কায় ভুগছেন। মনমোহন সিংহের জমানায় অরণ্যের অধিকার আইনের মূল কথা ছিল, আইনত জঙ্গলের জমিতে বসবাসকারী আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসীদের পুরুষানুক্রমে বসবাস করা জমি ও জঙ্গলের সম্পদের অধিকার সুনিশ্চিত করা। কিন্তু বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চের নির্দেশ, ওই আইনে যে সব পরিবারের অধিকার বা পাট্টার দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে, জুলাইয়ের মধ্যে তাদের উৎখাত করতে হবে।
কংগ্রেস, সিপিএমের অভিযোগ, মোদী সরকারই গত পাঁচ বছরে অরণ্যের অধিকার আইনকে দুর্বল করেছে। তার ফলেই আদিবাসী-বনবাসীদের জঙ্গলের জমিতে অধিকাংশ পাট্টার আবেদন খারিজ হয়েছে। ২০১৮-র ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেবে, ৪২.১৯ লক্ষ আবেদনের মধ্যে মাত্র ১৮.৮৯ লক্ষ আবেদন গৃহীত হয়েছে। নাশিক থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় কিসান লং মার্চেরও অন্যতম ক্ষোভ এই পাট্টা না পাওয়া।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্র অবস্থান নেবে কি না, তারও সদুত্তর নেই। মুখে কুলুপ আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রকের। সরকারের ভিতরের খবর, আদিবাসী মন্ত্রী জুয়াল ওরামের কথা কেউ কানে তুলছেন না। তার বদলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রককে এই মামলা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী আগেই সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এ দিকে, রাহুল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে সদ্য ক্ষমতায় আসা কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে নির্দেশ দিয়েছেন, যে সমস্ত পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে, সে সব নতুন করে দেখা হোক। পাট্টার আবেদনকারীদের সরকারই সাহায্য করুক। মানুষের ভোটকে সম্মান জানাতেই এই অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
সিপিএম আজ দাবি তুলেছে, আদিবাসী, বনবাসীদের উচ্ছেদ আটকাতে মোদী সরকার অধ্যাদেশ আনুক। বৃন্দা কারাট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে অভিযোগ তুলেছেন, ‘আপনার সরকার ক্ষমতায় এসে গত পাঁচ বছরে ঘুরপথে অরণ্যের অধিকার আইন লঘু করার চেষ্টা করেছে। প্রথমে খনন আইনে সংশোধন, তার পরে কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন আইনের সংশোধন হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি আবার জমি অধিগ্রহণ আইনে সংশোধন করেছে।’ বৃন্দার দাবি, ‘‘খনন, বেসরকারি সংস্থার কাজের সুবিধা করে দিতেই মোদী সরকার আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে চাইছে। যাতে ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস-এ ভারতের ফল ভাল হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy