টানা ভগত সম্প্রদায় ও চিনা রেডিওর সারি। ঝাড়খণ্ডে। — নিজস্ব চিত্র
একটা রেডিও ওঁদের শুদ্ধ দেশি জীবনযাত্রায় বিশেষ হেলদোল না তুললেও হইহই রইরই শুরু হয়েছে ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক মহলে। রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিকদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শোনার জন্য ওঁদের চিনা রেডিও কেন দেওয়া হল? এই নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে সরকার। তবে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে শাসক দল চুপ করেই বিতর্ককে থিতোতে চান।
আসলে, সকালে উঠে জাতীয় পতাকার পুজো করে এখনও দিন শুরু করেন ঝাড়খণ্ডের মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধীর কট্টর অনুগামী, টানা ভগত সম্প্রদায়ের মানুষরা। এখনও পোশাক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় শুধুমাত্র দেশি জিনিসই ব্যবহার করেন তাঁরা। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড রাজ্য খাদি বোর্ড ও কেন্দ্রীয় তসর রিসার্চ ও ট্রেনিং সংস্থা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শোনার জন্য টানা ভগত সম্প্রদায়ের ৪০ জনকে দিয়েছেন একটি করে রেডিও।
এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। অনুষ্ঠানের তাল কাটে রেডিওটি কোন সংস্থার তৈরি, তা দেখতে গিয়ে। দেখা যায় রেডিওটিতে লেখা রয়েছে ‘ফিলিপ্স’। কিন্তু বহু পরিচিত বানানে রয়েছে বাড়তি একটি ‘এল’। রব ওঠে এই রেডিও ‘মেড ইন চায়না।’
এই রেডিওর আঁতুড়ঘর হল ‘ডেলি মার্কেট’। রাঁচিতে চিনের জিনিস বিক্রির প্রধান বাজার। সেই ডেলি মার্কেটে আজ সকালে ঢুঁ মেরে জানা গেল, রেডিও থেকে মোবাইল, টর্চ, মোবাইল চার্জার সবই এখানে ‘মেড ইন চায়না।’ আসিকুল রহমান নামে এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘রেডিওতে মেড ইন চায়না লেখা না থাকলেও তার সব যন্ত্রাংশই চিন থেকে আমদানি করা। দিল্লির একটি সংস্থা চিন থেকে যন্ত্রাংশ এনে এই রেডিও তৈরি করে। দামও অনেক কম। একটা একটা রেডিও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। মূলত ‘ইউজ এন্ড থ্রো’ এই রেডিও কেনার সময় কোনও গ্যারান্টিও দেওয়া হয় না।’’
যেখানে দেশ জুড়ে চিনা জিনিস বয়কটের জিগির উঠছে, সেখানে টানা ভগতদের রেডিও উপহার দেওয়ার সময় আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের সভাপতি সুকদেব ভগত, সকলেই মনে করেন, যাঁরা চিরকাল দেশি জিনিসের উপর নির্ভর করে দিন গুজরান করেন, তাঁদের কেন এমন সংস্থার রেডিও দেওয়া হল? বিরোধীদের প্রশ্ন, অন্য দেশ হলে তাও মানা যেত। কিন্তু টানা ভগতদের বাড়িতে কেন চিনা রেডিও বাজবে?
তবে নতুন রেডিও পেয়ে খুশি টানা ভগত সম্প্রদায়ের ওই ৪০ জন গরিব মানুষ। তাঁরা এই বিতর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান সঞ্জয় শেঠ বলেন, ‘‘আমরা শুধু রেডিওটি বিলি করেছি। রেডিওটি কিনে আমাদের দিয়েছে কেন্দ্রীয় তসর রিসার্চ ও ট্রেনিং সংস্থা। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন বিতর্ক না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy