সীতারাম ইয়েচুরি না এস আর পিল্লাই—কে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হবেন, তা নিয়ে বিশাখাপত্তনমে পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিন পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ছিল। এ বার সীতারাম ইয়েচুরির জমানায় পলিটব্যুরোয় সংগঠনের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে কৌতূহল চরমে।
শনিবার থেকে দিল্লিতে সিপিএমের নতুন পলিটব্যুরোর বৈঠক বসছে। সেখানেই ঠিক হবে, পলিটব্যুরোয় সংগঠনের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে। দলের অন্দরে এ নিয়ে কৌতূহল চরমে। কারণ, এত দিন এস আর পিল্লাই সিপিএমের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। সংগঠনের করুণ অবস্থা নতুন সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির কাছে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। সংগঠনের রোগের দাওয়াই খুঁজতে বছরের শেষে প্লেনাম ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইয়েচুরি নিজের হাতেই সংগঠনের দায়িত্ব রাখেন, নাকি অন্য কারও হাতে তুলে দেন, সেটাই দেখার। পলিটব্যুরোর এক নেতার কথায়, ‘‘শনি-রবিবারের বৈঠকে সকলে মিলে আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত হবে।’’
এত দিন পলিটব্যুরোয় ইয়েচুরির হাতে দলের ছাত্র সংগঠন ও মহারাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের দায়িত্বে ছিলেন। উত্তরপ্রদেশ তথা হিন্দি বলয়ে সিপিএম দাঁত ফোটাতে না পারায় বারবার কারাটের দিকেই আঙুল উঠেছে। এ বার কারাটকে তাঁর উত্তরসূরি কী দায়িত্ব দেন, তা-ও দেখার।
পলিটব্যুরোর অন্য সদস্যদের মধ্যে বৃন্দা কারাট দলের মহিলা সংগঠন, আদিবাসী মঞ্চ এবং ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন। এম এ বেবি দেখতেন যুব সংগঠনের কাজ। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল থেকে পলিটব্যুরোয় আসা নেতারা মূলত নিজেদের রাজ্যের কাজই দেখাশোনা করতেন। এ কে পদ্মনাভন সিটু-র সভাপতি হিসেবে শ্রমিক সংগঠনের কাজ দেখতেন। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে সিপিএম নেতৃত্ব এখন গণ সংগঠনগুলিকে ঢেলে সাজানো ও আন্দোলন গড়ে তোলায় জোর দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দলের তরফে যুব, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা সংগঠন ও আদিবাসী মঞ্চের মধ্যে কোনটির দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করেই ঠিক করতে চাইছেন ইয়েচুরি।
নতুন পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক। এত দিন তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজস্থানের দায়িত্বে ছিলেন। রাজস্থানে তাঁর নেতৃত্বেই জল নিয়ে আন্দোলন করে সিপিএম সাফল্য পেয়েছিল। হান্নান মোল্লার পাশাপাশি পলিটব্যুরোয় নতুন মহম্মদ সেলিম, সুভাষিণী আলি, জি রামকৃষ্ণণকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে এত দিন জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্ব সামলাতেন সেলিম। পলিটব্যুরোয় হান্নানের মতো তাঁকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
পলিটব্যুরোর নেতারা অবশ্য মনে করছেন, আসল সিদ্ধান্ত হল সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে যাবে। এস আর পিল্লাই দলের একেবারে নিচু স্তর থেকে পলিটব্যুরোয় উঠে এসেছেন। তিনি সংগঠনের খুঁটিনাটি বোঝেন— এই যুক্তিতেই কারাট তাঁকে সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ইয়েচুরির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়েও পিল্লাইয়ের পক্ষে ছিল তাঁর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা। কিন্তু কারাট-পিল্লাইয়ের আমলে সংগঠনের দুর্বলতাও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। এ বার ইয়েচুরি সংগঠনের দায়িত্ব অন্য কারও হাতে তুলে দেন, না কি সংসদীয় কাজকর্ম সামলে সংগঠনের ভারও নিজের হাতেই রাখেন, সিপিএমের অন্দরমহলে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy