শর্মিলা চানু ও ডেসমন্ড কুটিনহো
যাঁর জন্য এত কাণ্ড, যাঁর হাত ধরে ভিন্ দেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ইরম শর্মিলা চানু, সেই প্রেমিকেরই পাত্তা নেই। শর্মিলা বা শর্মিলা-ঘনিষ্ঠ, অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা টি সুরেশ, কারও ই-মেলেরই জবাব দিচ্ছেন না তিনি।
অনশন ভাঙার পরেও হাসপাতালে থাকছেন শর্মিলা। তবে এখন আর কয়েদি হিসেবে নয়, রাজ্য সরকারের দয়ার পাত্র হয়ে। অনশন ভেঙে বিয়ে করতে চাওয়া শর্মিলাকে মণিপুরবাসী থাকার কোনও ঠাঁই দেয়নি। দাদা সিংহজিৎ অবশ্য জানিয়েছেন, বাড়ির দরজা বোনের জন্য সব সময় খোলা। কিন্তু বোনই আফস্পা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি আসবে না বলে জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও নিয়ম না থাকলেও বিচারাধীন রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য নির্দিষ্ট কেবিনে রাজ্য সরকার ‘দয়া করে’ শর্মিলাকে থাকতে দিয়েছে। সেটা শর্মিলার কাছেও যথেষ্ট গ্লানির। প্রতিবার ছাড়া পেলেই তিনি চলে যেতেন হাসপাতালের অদূরে শর্মিলা কানবা লুপের শিবিরে। শর্মিলা অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে দেড় দশকের সেই শিবির। নামিয়ে ফেলা হয়েছে শর্মিলার নাম।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি অবশ্য এ দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভবনে চানুকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ডাক্তারদের বক্তব্য, চানুর শরীর এখনও স্বাভাবিক নয়। বাইরের জীবন ও খাওয়া-দাওয়ায় অভ্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হবে। বাধ্য হয়েই তা মেনে নিয়েছেন শর্মিলা।
হাসপাতালে বসে সাক্ষাৎকারে শর্মিলা জানিয়েছিলেন, ডেসমন্ডের প্রেম, ডেসমন্ডের মার খাওয়াই তাঁকে অনশন ভাঙা ও আন্দোলনের ধারা বদলে প্রভাবিত করেছিল। মণিপুরবাসী শেষ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে না থাকলে গোয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড কুটিনহোর সঙ্গে বিদেশে পাড়ি দেবেন। শেষ খবর পেয়েছেন, ডেসমন্ড এখন আয়ারল্যান্ডে আছেন। এখন মণিপুরের পরিস্থিতি যা অগ্নিগর্ভ, তাতে ডেসমন্ড সেখানে পা রাখলে ফের আগের বারের মতোই মার খেতে পারেন।
কিন্তু তা বলে প্রেমিকার এত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ যাঁর জন্য, সেই প্রেমিক অন্তত ই-মেল বা ফোনে তো চানুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন! শর্মিলা জানান, ও পার থেকে কোনও সাড়া মিলছে না। টি সুরেশও বলেন, ডেসমন্ডকে বারবার মেল করলেও তিনি জবাব দিচ্ছেন না।
যার ফলে শর্মিলার শুভানুধ্যায়ীদের চিন্তা বাড়ছে।
ডেসমন্ড সম্পর্কে এর আগে শর্মিলার দাদা সিংহজিৎ বা সহযোদ্ধা বাবলু লৌইতংবামরা একাধিকবার সতর্ক করেছেন। সিংহজিৎ বারবার বলেছেন, ডেসমন্ডকে কাজে লাগিয়েছে ‘র’ ও ভারত সরকার। প্রেমের প্রলোভনে শর্মিলার মন বিক্ষিপ্ত ও বিপথে পরিচালিত করতেই প্রেমের নাটক করেছিলেন ডেসমন্ড। শর্মিলা অবশ্য বরাবরই একরোখা ছিলেন প্রেমের ব্যাপারে।
অনশন ভাঙার পরে প্রেমিক ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় বেজায় চিন্তায় ৪৪ বছরের শর্মিলা। মণিপুরের লৌহমানবীর শুভানুধ্যায়ীরা আবার আশঙ্কা করছেন, ডেসমন্ড সাড়া না দিলে শর্মিলার দু’কূলই যাবে। ওই অবস্থায় আদৌ রাজনৈতিক লড়াই চালানোর মতো মানসিকতা তাঁর না-ও থাকতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy