খেলার আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। —রয়টার্স।
কাকতালীয় হলেও বাস্তব! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার মামলা গত ৩১ অক্টোবর খারিজ করে দিয়েছে মুম্বইয়ের মাঝেরগাঁও নগর দায়রা আদালত। তার ঠিক এক মাসের মাথায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় জাতীয় সঙ্গীত আবমাননার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ ১১ জন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে। মুম্বইয়ে মমতার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সেখানকার বিজেপি নেতা অরবিন্দ গুপ্ত। আর শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সচিব। বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার মামলা নিয়ে সরব শাসক তৃণমূল।
কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার নিয়ম কী? কী বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। ১৯৭১ সালে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা রুখতে আইন তৈরি হয়েছিল। পিআইএনএইচ (প্রিভেনশন অফ ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনার) আইন ১৯৭১-এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। জাতীয় সঙ্গীতের বিষয়ে সেটিকেই নিয়মাবলি হিসেবে ধরা হয়। প্রশ্নোত্তরে তারই নির্যাস দেওয়া হল।
জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কোনও সময়সীমা রয়েছে?
রয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত পুরোটা পরিবেশন করতে হলে তা শেষ করতে হবে ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে।
জাতীয় সঙ্গীত সংক্ষেপে গাওয়া যায়?
যায়। কোন কোন অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে তা-ও নির্ধারিত রয়েছে। সংক্ষিপ্ত জাতীয় সঙ্গীতটি হল, ‘জন-গণ-মন-অধিনায়ক জয় হে ভারত-ভাগ্য-বিধাতা জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।’ নিয়ম বলছে, সরকারি বা অন্য প্রতিষ্ঠানের ‘টোস্ট সেরিমনি’তে (যেখানে পানভোজনের আয়োজন থাকে) সংক্ষিপ্ত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতে হবে। তা শেষ করতে হবে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে।
কোন কোন কর্মসূচিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায়?
সামরিক বা অসামরিক যে কোনও কর্মসূচিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হতে পারে। কোনও ব্যক্তি বা অতিথিকে জাতীয় অভিবাদন জানানোর সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল বা লেফটেন্যান্ট গভর্নরদের যে কোনও অনুষ্ঠান। এ ছাড়া যে কোনও ধরনের কুচকাওয়াজেও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায়।
কোন কোন অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক?
রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর যে সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, তার শুরু এবং শেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি যখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, তার অব্যবহিত আগে পরিবেশন করতে হবে জাতীয় সঙ্গীত।
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে কি জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক?
নির্দেশিকা বলছে, তেমন কোনও নিয়ম নেই। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত সব সময় না-ও পরিবেশিত হতে পারে। তবে যদি সেটি কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, তা হলে সেখানে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হতে কোনও সমস্যা নেই।
বাদ্যযন্ত্রে জাতীয় সঙ্গীতের সুর পরিবেশন কি নিয়মের মধ্যে পড়ে?
বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীতের সুর পরিবেশিত হতেই পারে। তবে তার আগে সমবেত জনতাকে সাতটি ড্রাম বিট্সের মধ্য দিয়ে জানান দিতে হবে যে, জাতীয় সঙ্গীত বাজতে চলেছে। যাতে কাউকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে না হয় এবং জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা অটুট থাকে। সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার বাদ্যযন্ত্রে পরিবেশিত জাতীয় সঙ্গীতের সুরের সঙ্গে গলা মেলানো কাম্য।
দেশের অনেক স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতকেই প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া কি নিয়মসিদ্ধ?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে কোনও স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিন শুরু করতে পারে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে। তবে যথাযথ ভাবে তা যাতে পরিবেশিত হয়, সে ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষিত করার কাজও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের করতে হবে।
ভারতের কোনও খেলার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময়ে কি স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রত্যেকের উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক?
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন সংক্রান্ত সাধারণ নিয়মাবলিতে দু’টি নিয়মের কথা বলা রয়েছে। প্রথম, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময়ে প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তাতে মনোনিবেশ করতে হবে। আরও একটি বিষয় উল্লিখিত রয়েছে— জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে কেউ কোনও বাধা দিতে পারবেন না।
কোনও চলচ্চিত্র, নাটক বা তথ্যচিত্রের মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হলে কি প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের উঠে দাঁড়াতে হবে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, তার কোনও প্রয়োজন নেই। কেন প্রয়োজন নেই, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, দৃশ্যের মাঝখানে প্রেক্ষাগৃহে উঠে দাঁড়াতে হলে তাতে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের বদলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। যা আসলে জাতীয় সঙ্গীতের অমর্যাদার সমান।
বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি এলে সে ক্ষেত্রে নিয়ম কী?
সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে যে দেশের অতিথি এসেছেন, আগে সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। তার পরে হবে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।
জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা নিয়ে নানা সময়ে মামলা হয়েছে। কখনও তা কোনও রাজ্যের হাই কোর্টে, কখনও সুপ্রিম কোর্টে। ১৯৭১ সালের আইন অনুযায়ী জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার শাস্তিও রয়েছে। আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের বিধান রয়েছে আইনে। যদিও বিভিন্ন মামলায় প্রেক্ষিত দেখে কখনও তা খারিজ করা হয়েছে, কখনও আবার অভিযুক্তকে সতর্ক করেছে আদালত। জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার জন্য সাজা হয়েছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে নজির নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy