একটানা পড়ার পরে বাজারে সবে সুদিনের হাওয়া বইছিল। ১১ এপ্রিল থেকে সাত দিন ধরে সেনসেক্স উঠেছিল মোট ৬২৬৯ পয়েন্ট। অনেক দিন বাদে পৌঁছেছিল ৮০ হাজারে। এর পরেই ছন্দপতন। কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হানা এবং তাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতি আটকে দিল আরও উত্থানের পথ। ফের মাথা তুলল অনিশ্চয়তা।
লাগাতার উঠে ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন শিখরে (৮৫,৮৩৬) পৌঁছেছিল সেনসেক্স। তার পরেই শুরু হয় পতন। ৪ মার্চ নামে ৭২,৯৯০-এ। কারণ, তখনই বোঝা যায় অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ছে। উৎসবেও চাহিদায় ভাটা। প্রত্যাশার থেকে খারাপ ফল করেছে অনেক সংস্থা। সরতে থাকে বিদেশি লগ্নি। এক দিকে, ভারতীয় অর্থনীতিতে ঝিমুনি ভাব। অন্য দিকে, চিনে সরকারের আর্থিক ত্রাণ। বহু বিদেশি সংস্থা ভারত ছেড়ে চিনে যেতে থাকে। দুর্বল হয় ভারতীয় বাজার। প্রমাদ গোনেন শেয়ার-ফান্ডের কয়েক কোটি লগ্নিকারী। এর পরেই বিশ্ব বাজারে ধস নামায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি। দেশের বাজারে দুর্বলতা বাড়ে। বাজেটে করদাতাদের বিপুল ছাড়, মূল্যবৃদ্ধির মাথা নামানো এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ ছাঁটাইও কাজে লাগেনি। শেষে অবশ্য ট্রাম্পই বাজারে প্রাণ ফেরালেন চিন বাদে অন্যান্য দেশের শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত করে। শক্তি জোগালো এপ্রিলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বিতীয় বার সুদ হ্রাসও। সাত দিনের লাফে হারানো জমির অনেকটা উদ্ধার করল বাজার। সেই স্বস্তিই কেড়েছে পহেলগাম কাণ্ড।
একে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার ৯০৪ নেমে ৭৯,২১৩ হয় সেনসেক্স। অনিশ্চয়তা নিয়েই আজ শুরু হবে সপ্তাহ। যুদ্ধ বাঁধলে বাজার ধাক্কা খাবে বটে। তবে ভারতীয় অর্থনীতি যে রকম পোক্ত, তাতে বড় ক্ষত তৈরি হবে না। বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পাকিস্তানের পক্ষে সামাল দেওয়া শক্ত হতে পারে।
১৮ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ছিল ৬৮,৬১৫ কোটি ডলারে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের ১০২১ কোটি ডলার। যুদ্ধ চালাতে গেলে এই ভান্ডার বড় হতে হয়। কাজেই যুদ্ধ-অর্থনীতিতে ভারত এগিয়ে। শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রসম্ভারেও। অতীতেও পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে এ দেশের অর্থনীতি তেমন ঝুঁকে পড়েনি। সংসদ ভবনে জঙ্গি হানা ছাড়া শেয়ারে বড় প্রভাব পড়েনি। এমনকি কার্গিল যুদ্ধের সময়েও
বাজার উঠেছে। সামান্য কমে বড় মেয়াদে। এ বারও যুদ্ধ বাঁধলে তেমন বড় পতনের আশঙ্কা করা হচ্ছে না। ৩% পর্যন্ত পড়তে পারে, এটা ধরে চলতে হবে। তবে অনিশ্চয়তা থাকবে। লগ্নি করতে হবে দেখেশুনে। তবে এখনও আসছে বিদেশি লগ্নি।
এ দিকে, জানুয়ারি-মার্চে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের নিট মুনাফা ৬.৪% বেড়ে হয়েছে ২২,৬১১ কোটি টাকা। গোটা বছরে লাভ ৮১,৩০৯ কোটি। ভাল ফল করেছে এইচসিএল টেক, টেক মাহিন্দ্রা, আদানি এনার্জি। লাভ কমেছে মারুতি, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, এসিসি-র।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)