গত সপ্তাহে পহেলগামে জঙ্গিদের নৃশংস নাশকতার পরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কার্যত তলানিতে। নিয়ন্ত্রণরেখাও রীতিমতো তপ্ত। বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে লাগাতার গোলাবর্ষণ করছে পাকিস্তান। স্বভাবতই ত্রস্ত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামগুলির বাসিন্দারা। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে ওই বাসিন্দারা ফের পুরনো বাঙ্কারগুলিতে আশ্রয়ের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
পহেলগামের জঙ্গি হামলা জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে সবচেয়ে নৃশংসতম নাশকতা। জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-এ-তইবার এই হত্যালীলা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পারস্পরিক অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। সেনাবাহিনীর তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত তিন দিন ধরে তুতমারি গলি এবং রামপুর সেক্টরে বিনা প্ররোচনায় ‘ছোট আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা’ চালিয়েছে পাক সেনা। ভারতীয় সেনাবাহিনী তার সমুচিত জবাব দিয়েছে।
দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে এই সংঘাতপূর্ণ আবহের মাসুল সবচেয়ে বেশি গুনতে হচ্ছে নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় গ্রামগুলিকে। কুপওয়ারার উরি, গুরেজ়, তাংধার, কিরেন সেক্টর এবং জম্মুর পুঞ্চ জেলার জম্মু, রাজৌরি, কাঠুয়া, সাম্বা সেক্টরের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া কৃষি জমি থেকে গ্রামবাসীরা যেন দ্রুত ফসল কেটে নেন এবং বাঙ্কারগুলি পরিষ্কার করা শুরু করেন। সীমান্তে এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনার কথা মাথায় রেখে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য গত ছ-সাত বছরে ওই এলাকায় কয়েক হাজার বাঙ্কার তৈরির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। ওই সব এলাকার সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-অশিক্ষককর্মীদের নিরাপত্তার জন্যও বাঙ্কার তৈরি হয়েছে। গ্রামগুলির বাসিন্দারা যে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন তা স্পষ্ট চুরুন্ডা গ্রামের সরপঞ্চ মেহতাব আলম চিচির কথায়। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও মুহূর্তে আমাদের গ্রামগুলি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। আতঙ্কের মধ্যে আছি। গোলাগুলি শুরু হলে ওই বাঙ্কারগুলিই আমাদের একমাত্র ভরসা।’’
চামিলা গ্রামের শফকাতের কথায়, ‘‘গুলিগোলার শব্দ আমাদের মনে করায় সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলির কথা। আমরা আমাদের বাঙ্কার পরিষ্কার করেছি এবং রসদ মজুত করেছি। শান্তিতে বাঁচার চেষ্টা করেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।" বালাকোটের মেন্ধার সেক্টরের মহম্মদ রমজান টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েরা সীমান্তের কাছে স্কুলে পড়তে যায়, এবং প্রতিটি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন আমাদের মনে করিয়ে দেয় কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তারা। প্রতিদিন আমরা ওদের জন্যপ্রার্থনা করি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)