কয়েক মাস আগে দলের রাজ্য সম্মেলন থেকে বিদ্রোহ করে ওয়াক আউট করেছিলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। এ বার ভি এস-কে অন্যায় ভাবে নিশানা করার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কেরল রাজ্য কমিটির বৈঠক ‘বয়কট’ করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি!
কেরলে সম্প্রতি হয়ে-যাওয়া আরুবিক্কারা উপনির্বাচনে সিপিএমের হারের ময়না তদন্ত উঠে এসেছিল এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। ওই উপনির্বাচনের প্রচারে ভি এস-কে সামনে রেখে পিনারাই বিজয়ন আড়ালে চলে যাওয়ার ফল দলকে ভুগতে হয়েছে— এমনই বিশ্লেষণ খাড়া করেছে সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্পাদকণ্ডলী! দলের রাজ্য নেতৃত্বের এমন মনোভাবের কথা জানতে পেরেই ক্ষুব্ধ ইয়েচুরি আর কেরল-মুখো হতে চাননি বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের একাংশের মতে, কেরল সিপিএমের চিরাচরিত গোষ্ঠী-লড়াই বন্ধে তিনি যে কড়া হতে চান, বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে সাধারণ সম্পাদক সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন।
রাজ্য সম্মেলনেই এ বার দলের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন ভি এস। তাঁর দল-বিরোধী কাজকর্মের বিরুদ্ধে রীতিমতো নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করিয়েছিল কেরলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। যার বিরুদ্ধে দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে চিঠি লিখেছিলেন ভি এস। রাজ্য নেতৃত্বের রোষের মুখেই চার মাস আগে বিশাখাপত্তনমে ভি এস-কে কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ থেকে সরিয়ে আমন্ত্রিত সদস্য করে রাখা হয়েছিল। তার পরে কেরল সিপিএমের অন্দরে সাময়িক সন্ধি-পর্বও চলছিল। কিন্তু আরুবিক্কারা উপনির্বাচনের পরে আবার বিরোধী দলনেতা ভি এস-কে কাঠগড়ায় তুলতে সক্রিয় হয়েছে বিজয়ন শিবির! যা অনুমোদন করছেন না ইয়েচুরি।
তিরুঅনন্তপুরমে গত বৃহস্পতি থেকে শনিবার, তিন দিন ছিল রাজ্য কমিটির বৈঠক। সংসদের বাদল অধিবেশনও শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। কথা ছিল, সেই দিনই বিকালে তিরুঅনন্তপুরম গিয়ে বৈঠকে যোগ দেবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু তার দু’দিন আগেই এক বার দক্ষিণী ওই শহরে গিয়ে বিপদের গন্ধ পেয়েছিলেন ইয়েচুরি! রাজ্যের ইউডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে কেরলের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত মানববন্ধনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিরুঅনন্তপুরমে গিয়েই তিনি জানতে পারেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সর্বশেষ রিপোর্টের কথা। যেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে বিজয়নকে আড়ালে এবং ভি এস-কে সামনে রেখে প্রচার উপনির্বাচনে সিপিএমের সুবিধা করতে না পারার অন্যতম কারণ। ক্ষুব্ধ ইয়েচুরি এর পরেই ঠিক করেন, রাজ্য কমিটিতে যখন ওই রিপোর্ট পেশ হবে, তিনি সেখানে থাকবেন না।
প্রত্যাশিত ভাবেই এই ঘটনা নিয়ে দলের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। ইয়েচুরির ঘনিষ্ঠ পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘কেরলে উপনির্বাচনে আমাদের হার এবং বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত নিশ্চয়ই উদ্বেগজনক। কিন্তু সেখানে জোর করে কাউকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক। এই চেষ্টায় যে সাধারণ সম্পাদকের কোনও অনুমোদন নেই, সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল!’’ আর কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বিজয়ন-শিবিরের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য কমিটির সব বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন, এমন তো কোনও কথা নেই! কয়েক দিন আগেই তো রাজ্য পার্টির কর্মসূচিতে উনি এসেছিলেন।’’
রাজ্য কমিটির বৈঠকেও অবশ্য বিজয়ন-তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক জন সদস্য মত দিয়েছেন, যাঁরা সাংগঠনিক কাজকর্মের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা অনেক সময়েই প্রচারের সামনের সারিতে থাকেন না। এই নিয়ে এখন জলঘোলা করার কী আছে? তার পাশাপাশিই, দলের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন বৈঠকে বলেছেন, বিজেপি-র বিপদকে খাটো করে দেখেছিলেন জেলা নেতৃত্ব। আরুবিক্কারা হারা আসনই ছিল। কিন্তু বাম ভোট ভেঙে বিজেপি-তে যাওয়ায় লাভবান হয়েছে কংগ্রেস। সিপিএম প্রার্থী এম বিজয়কুমার চার বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটও ধরে রাখতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy