Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সুরের নামে চেনা রূপকথার গ্রামে

চেরাপুঞ্জি থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে পূর্ব খাসি পাহাড়ে কংথং গ্রামে চলে এমনই কাণ্ডকারখানা।

সুরের-গ্রাম: রাবার সেতুতে পারাপার খাসি পাহাড়ের কংথংয়ে। নিজস্ব চিত্র

সুরের-গ্রাম: রাবার সেতুতে পারাপার খাসি পাহাড়ের কংথংয়ে। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

নীল পাহাড়ের কোলে কোনও বাঁকে ছেলে আড্ডায় মেতেছে বন্ধুদের সঙ্গে। বেলা গড়াতে ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে মা সুর তোলেন গলায়— ‘কুকু উ কুকুর রু....’। পাথরে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনি পৌঁছয় গল্পে মত্ত কুকু উ কুকুর রু-র কানে। বন্ধু ইউউ উ উই আর আআই উউ কুকু-কে বিদায় জানিয়ে বাড়ির পথে এগোয় সে।

এমন শুনে মনে হয় হয়তো রূপকথা। আদপে তা নয়। চেরাপুঞ্জি থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে পূর্ব খাসি পাহাড়ে কংথং গ্রামে চলে এমনই কাণ্ডকারখানা। সেখানে বাসিন্দাদের নামই যেন গানের সরগম। একে অপরকে ডাকা হয় হরেক সুরে। সকলের পরিচয় পৃথক সুরই!

কংথং ট্যুরিজম কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান রোথেল খংসিট জানান, বহু যুগ ধরে ওই গ্রামের গর্ভবতী মায়েরা পাহাড়-জঙ্গলে কান পেতে পাখির ডাক, ঝর্ণার শব্দ থেকে সুর বোনেন। সন্তানের জন্মের পরে সেই সুর তার কানের কাছে গুণগুণ করেন। সুর থেকে জন্ম নেয় গান। যার নাম ‘জিংগারওয়াই লেওবেই’। ওই গানের প্রথম অক্ষর আর তার সুর পরে বদলায় সদ্যোজাতের নামে।

ছবির মতো কংথং গ্রামে বাসিন্দা ৭০০। পাহাড়ি নদীর উপরে রাবার গাছের শিকড়ে তৈরি ‘জীবন্ত সেতু’ পার করে চলে যাতায়াত। গ্রামের প্রবীণরা জানান, সভ্যতার দাবি মেনে আজকাল গ্রামবাসীদের খাতায়-কলমে খাসি নামও রাখা হচ্ছে। কিন্তু সেই নাম শুধু স্কুল বা অফিসের কাজের জন্য। কেউ মারা গেলে
তাঁর নামের সুর আর গানও শেষ হয়ে যায়। তাঁরা আরও জানান, ‘জিংগারওয়াই লেওবেই’-এর লিখিত স্বরলিপি নেই। বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের নাম সুর করে গেয়ে মোবাইলে রেকর্ড করে রাখছে।

আজব সেই গ্রামের দুই বোন সিডিয়াপ খংসিট ও সিথোহ খংসিটের জীবন নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘মাই নেম ইজ ইউউউউ’ গড়েছেন মণিপুরি পরিচালক ওইনাম দোরেন। দেখানো হয়েছে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য শিলং শহরে গিয়ে নগরসভ্যতা, পশ্চিমী গানের সংস্পর্শে এলেও কী ভাবে বাঁচছে ‘জিংগারওয়াই লেওবেই’। দেশ-বিদেশে পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই সিনেমা দু’বার দেখেছেন অসমের রাজ্যপাল বনোয়ারিলাল পুরোহিত। পরে তিনি সেই গ্রামের দেড়শো মানুষকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানান। নিজের কানে শোনেন সুর-নামের গল্প।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE