তেজস্বী যাদব। ছবি: পিটিআই।
চারদিনের একটা দিন কেটে গেল। তেজস্বী যাদব উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন না। দিলেন না পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাখ্যাও। আর এরই মধ্যে নীতীশকে নিয়ে কার্যত শুরু হয়েছে বিজেপি-কংগ্রেসের দড়ি টানাটানি। বিজেপির জন্য দরজা খুলে রাখা নীতীশ কুমারকে সঙ্গে রাখতে আরও তৎপর হচ্ছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী ফোন করলেন নীতীশকে।
দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস না করার যে বার্তা গত কাল নীতীশ দিয়েছেন, তারপর বিজেপির ভরসা বেড়েছে। লালুর সঙ্গ ছাড়লে নীতীশকে সমর্থনের কথাও জানিয়ে রেখেছে তারা। নীতীশের এই বিজেপি-ঝোঁক দেখেই কংগ্রেস তাঁকে ধরে রাখতে তৎপর। গত কাল উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিরোধী বৈঠকে শরদ যাদব এলেও কংগ্রেস এখনও নিশ্চিত নয়।
কংগ্রেস মনে করছে, নিজের ‘নিষ্কলঙ্ক’ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে নীতীশ আজ বা কাল বিজেপির দিকে ঝুঁকতেও পারেন। এই অবস্থায় নীতীশকে আঁকড়ে রাখতে রাহুল তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নীতীশ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন বলেই কংগ্রেসের দাবি।
এরই মধ্যে আজ বিহার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন তেজস্বী ও তাঁর দাদা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তেজপ্রতাপ। গত কালই জেডিইউয়ের তরফে যাদব পরিবারকে চার দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। সরাসরি উপমুখ্যমন্ত্রী পদে তেজস্বীর ইস্তফা না চেয়ে সিবিআইয়ের দায়ের করা অভিযোগ সম্পর্কে যাদব পরিবারের কাছে তথ্যনিষ্ঠ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ব্যাখ্যা দূর, সেই আলঙ্কারিক ভাষা ব্যবহার করে তেজস্বী বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের।’’ তাঁর মতে, আসলে মোদী-শাহ লালুজিকে ভয় পান। এখন তাঁর মতো এক যুবককেও ভয় পাচ্ছেন। ‘হোটেলের বিনিময়ে মহার্ঘ জমি লেনদেন’-এর অভিযোগ এড়িয়ে তেজস্বী বলেন, ‘‘যখনকার ঘটনা বলা হচ্ছে আমার তখন ১৪-১৫ বছর বয়স। ভাল করে গোঁফই গজায়নি। এই বয়সের একটি ছেলে এমন দুর্নীতি করতে পারে?’’ একই সঙ্গে তেজস্বী জানান, বিজেপি যত চেষ্টাই করুক না কেন, বিহারের জোট সরকার ভাঙছে না।
আরও পড়ুন: জঙ্গিদের জমি দিচ্ছেন মোদীই: রাহুল
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু দোলাচলে। নীতীশ কী করতে পারেন, এই নিয়েই তাঁরা ধন্দে। আসলে সকলে ২০১৯-এর লোকসভাকে বেশি গুরুত্ব দিলেও বিশেষজ্ঞদের মতে নীতীশের কাছে ২০১৯-এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোট। গত লোকসভা ভোটে বিহারে বিজেপি তথা এনডিএ আসন সংখ্যার নিরিখে জয়ধ্বজা ওড়ালেও শতাংশের ভোটের হিসেবে তারা পেয়েছিল ৩৯.৫% ভোট। বিজেপি ২৯.৯%। তখন ত্রিধা বিভক্ত বিরোধীরা পেয়েছিল ৪৫.১% ভোট (আরজেডি ২০.৫%, জেডিইউ ১৬.০% ও কংগ্রেস ৮.৬%)। বিভক্ত হওয়ায় আসনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এক বছর পরে মহাজোট গড়ে বিজেপিকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন লালু-নীতীশ। তিন-চতুর্থাংশ আসন দখলে আনে মহাজোট। এনডিএ জোটের ভোট কমে ৩৪.১ শতাংশে দাঁড়ায়। বিজেপি পায় ২৪.৪% ভোট। পাশাপাশি, জোটবদ্ধ বিরোধী ভোট একত্রে ৪১.৯% (আরজেডি ১৮.৪%, জেডিইউ ১৬.৮%ও কংগ্রেস ৬.৭%)।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আসলে বিজেপি-কে নীতীশের যত না দরকার তার থেকেও বিজেপির নীতীশকে অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ বিরোধী জোট ভাঙতে না পারলে ২০১৪-র পুনরাবৃত্তি ২০১৯-এ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে লোকসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে বিহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মোদীর সঙ্গে দর কষাকষিতে নীতীশ এক ধাপ এগিয়েই থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy