Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাসস্থান নেই, চাকরি ছাড়ছেন বৃহন্নলারা

আলুভা স্টেশনে হাউজ কিপিং (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মী) বিভাগে কাজ পেয়েছিলেন আম্রুতা নামে এক বৃহন্নলা কর্মী। বাড়ি ছেড়ে নতুন শহরে এসে কর্মক্ষেত্রের কাছে নিরাপদ বাসস্থান খুঁজে পাননি তিনি। ফলে বাধ্য হয়েই কাজে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেন।

সংবাদ সংস্থা
কোচি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

বৃহন্নলা কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুতেই নজর কেড়েছিল কোচি মেট্রো। অথচ, চাকরিতে যোগ দিতে না দিতেই কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ওই কর্মীদের অধিকাংশ। যার একটা বড় কারণ, থাকার জায়গার অভাব। কর্মীদের অভিযোগ, সংস্থার তরফে তাঁদের বাসস্থান দেওয়া হয়নি। কোচি শহরে বৃহন্নলা পরিচয়ে বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছেন না তাঁরা। আর পেলেও বেতনের টাকায় খরচে কুলিয়ে উঠতে না পেরে চাকরি ছাড়ছেন অনেকেই।

আলুভা স্টেশনে হাউজ কিপিং (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মী) বিভাগে কাজ পেয়েছিলেন আম্রুতা নামে এক বৃহন্নলা কর্মী। বাড়ি ছেড়ে নতুন শহরে এসে কর্মক্ষেত্রের কাছে নিরাপদ বাসস্থান খুঁজে পাননি তিনি। ফলে বাধ্য হয়েই কাজে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেন। আলুভা থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ এর্নাকুলামে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন। যার ভাড়া দৈনিক ৪০০ টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘মাসে মাত্র ৯০০০ টাকা বেতনে এই ভাড়া দিয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রতি সপ্তাহে আমার কাজের শিফ্‌ট বদলে যাওয়ায় আংশিক সময়ের জন্য অন্য কোথাও কাজ নেওয়াও সম্ভব হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, টিকিট কাউন্টারে যে বৃহন্নলা কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মাসিক বেতন সাড়ে দশ হাজার। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা পাচ্ছেন ৯ হাজার টাকা। আম্রুতা জানিয়েছেন, এর আগে পরিচয় গোপন করে শহরের বাইরে মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পরে আর সেই উপায়ও ছিল না। কোচি মেট্রোর প্রচারের চোটে এখন অম্রুতার পরিচয় জেনে গিয়েছেন সবাই। ফলে বাধ্য হয়েই বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে তাঁকে।

অম্রুতা একা নন। প্রাথমিক ভাবে কোচি মেট্রোয় যে ২৩ জন বৃহন্নলা কর্মী নিয়োগ করে হয়েছিল, তাঁদের ১১ জন ইতিমধ্যেই চাকরি ছেড়েছেন। আর এক বৃহন্নলা কর্মী ফায়জু বলেছেন, ‘‘চাকরি পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের। কেউ বলেছেন বৃহন্নলাদের ভাড়া দিলে পড়শিরা আপত্তি করবেন। কেউ আবার ভেবেছেন আমরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে যৌন ব্যবসা চালাব।’’ শহরে মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও না জোটায় চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার আনন্দ থিতিয়ে গিয়েছে কয়েক দিনেই।

কোচি মেট্রোর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংস্থার পক্ষে বৃহন্নলা কর্মীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা চাকরি পেয়েছেন কুদুম্বশ্রী নামে একটি দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের অধীনে। এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৬২৮ জন কাজ করেন কোচি মেট্রোর বিভিন্ন শাখায়। বৃহন্নলাদের বিশেষ সুবিধে দিলে বাকিদেরও তা দিতে হবে। যা সম্ভব নয়। বৃহন্নলা সমাজকর্মী বিজয় রাজা মল্লিকার ক্ষোভ, ‘‘কেরল সরকার ও কোচি মেট্রো কর্তৃপক্ষ আমাদের সমাজে সমানাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করলেও সমাজ এখনও আমাদের মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। সমাজ না বদলালে আমাদের অবস্থারও কোনও পরিবর্তন হবে না’’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE