Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Assam Massacre

‘ক’দিন আগেই ওরা বলে গিয়েছিল, বাড়াবাড়ি করলে ঘরে ঘরে ঢুকে মারা হবে’

হস্পতিবার রাতে পাঁচ বাঙালিকে হত্যা করার পরে এমনটাই ধারণা অসমে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের তিরিশটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক সুকুমার বিশ্বাসের।

পরিজনকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়েরা।

পরিজনকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়েরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২৩
Share: Save:

বাঙালিদের মনে আতঙ্ক ছড়াতে চাইছে কিছু মানুষ। বাংলাভাষী প্রান্তিক মানুষদের মেরেই সেই কাজটা করতে চাইছে তারা। বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ বাঙালিকে হত্যা করার পরে এমনটাই ধারণা অসমে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের তিরিশটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক সুকুমার বিশ্বাসের।

বাংলা এবং হিন্দিভাষী প্রান্তিক মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনা এর আগেও বার বার ঘটেছে অসমের বুকে। আর সেই একই কায়দায় বৃহস্পতিবারের ঘটনা ঘটায় স্বভাবতই সন্দেহের তির গিয়েছেআলফার দিকে। ওই দিন প্রাণে বেঁচে যাওয়া সহদেব নমঃশূদ্রেরও সন্দেহ, যারা হামলা চালিয়েছে তারা আলফা জঙ্গিই।যদিও পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (স্বাধীন) গোটা ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে।

আর সেখান থেকেই সন্দেহ জোরদার হচ্ছে আলোচনাপন্থী আলফা সদস্যদের প্রতি। অসমের বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের ধলাচরিয়া এলাকার সভাপতি অজিত দেবনাথেরও দাবি, ঘটনার পেছনে রয়েছে আলোচনাপন্থী আলফা সদস্যরাই। অজিতদের সংগঠন শুক্রবার তিনসুকিয়া জেলায় বনধে্র ডাক দেয়। তাঁর মতোই নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়কসুকুমার বিশ্বাসও বলেন,“তিন দিন আগেই মৃণাল হাজারিকা এবং জিতেন দত্তের মতো আলোচনাপন্থী আলফা নেতারা রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, এনআরসি-র বিরুদ্ধে যে বাঙালিরা বাড়াবাড়ি করছে, তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মারা হবে।”

আরও পড়ুন: মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে সহদেবের একটাই প্রশ্ন,এবার তো বেঁচে গেলাম, এর পর...?

আলফা না তাদের আলোচনাপন্থী অংশ, কারা ওই হত্যা-কাণ্ডের পিছনে? সে বিষয়ে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মুখ খোলেননি অসমের পুলি‌শ প্রধান কুলধর শইকিয়া এবং তাঁর সহকারী এডিজি মুকেশ অগ্রওয়াল। দু’জনে শুক্রবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সেখানে কুলধর বলেন, “আমরা কিছু নির্দিষ্ট সূত্র পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়িই দোষীদের গ্রেফতার করে হবে।” তবে গোটা ঘটনা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানো যে কঠিন হয়ে উঠবে তা এদিন ঘটনাস্থলে গিয়েই টের পেয়েছেন শীর্ষ পুলিশ কর্তারা।

বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে রাস্তা বন্ধ করে বন‌্ধ করছেন অসমের বাঙালিরা।

সকাল থেকেই মৃত পাঁচজনের দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিভিন্ন বাংলাভাষী সংগঠনের সদস্যেরা। গোটা তিনসুকিয়া জেলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যে আতঙ্ক অনেকটাই ছড়িয়েছে, তার প্রমাণ মেলে শুক্রবার সকালেই। বাংলাভাষী মানুষদের মনে ফিরে আসে নব্বইয়ের আতঙ্ক। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাতসকালেই আটক করা হয় দুই আলোচনাপন্থী আলফা নেতা মৃণাল হাজারিকা এবং জিতেন দত্তকে। আর সেই খবর ছড়াতেই পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কিছু অসমিয়া যুবক। তিনসুকিয়া এবং ধেমাজি জেলার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষেরও কয়েকটি ঘটে। রাজধানী গুয়াহাটিতেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু হয়। বিক্ষোভ দেখান কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ। তিনি বলেন,‘‘বিজেপি সরকারের ভ্রান্ত নীতির জন্যই এই ঘটনা।’’ একই ভাবে বিজেপি সরকারের নীতিকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।

আরও পড়ুন: ‘তিনসুকিয়ার ঘটনায় আমাদের রক্তে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে’

সেই বিক্ষোভ অশান্তির মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের তিন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, তপন গগৈ এবং কেশব মোহন্ত। কেশব নিহত পাঁচজনের পরিবারকে এককালীন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাঙলাভাষী মানুষদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেন,“যারা এই কাজ করেছে তাঁরা কাপুরুষ। তাদের প্রত্যেককে আইনানুগ শাস্তি দেওয়া হবে।’’ কিন্তু তার মধ্যেই ফের বিতর্ক তৈরি করে অসমের বিজেপি নেতা এবং রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁসাইয়ের বক্তব্য। তিনি এ দিন বলেন,“কে শত্রু, কে মিত্র— অসমের মানুষকে জানতে হবে। বাঙালি হিন্দুরা অসমের শত্রু নন।” ঠিক একই ভাবে বিতর্ক উস্কে দেন হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। তিনি ইঙ্গিত করেন, গোটা ঘটনার পিছনে মৌলবাদীদের হাত থাকতে পারে। এই শিলাদিত্যই কিছুদিন আগেই বাঙালিদের পাল্টা মারের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

আগামিকাল শনিবার অসম বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বাংলাভাষী সংগঠনগুলি।গোটা অসম জুড়ে জাতি-ধর্ম ভিত্তিক একটা মেরুকরণের অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে বলে তাদের মত।

ছবি: পিটিআই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE