Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

বাবরি মামলা কোন পথে

মুরলী মনোহর জোশী এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ ২১ নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালাতে সিবিআইকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পি সি ঘোষ এবং বিচারপতি আর এফ নরিম্যান-এর বেঞ্চ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, রায়বরেলী এবং লখনউ আদালতকে দু’বছরের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। বাবরি কাণ্ডের শুরু থেকে ঘটনাগুলি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:১৯
Share: Save:

মুরলী মনোহর জোশী এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ ২১ নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালাতে সিবিআইকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পি সি ঘোষ এবং বিচারপতি আর এফ নরিম্যান-এর বেঞ্চ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, রায়বরেলী এবং লখনউ আদালতকে দু’বছরের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। বাবরি কাণ্ডের শুরু থেকে ঘটনাগুলি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

১৮৫৩: অওয়াধের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের সময় বাবরি মসজিদ নিয়ে হিংসার প্রথম সূত্রপাত। হিন্দু সম্প্রদায় নির্মোহীরা দাবি করে, বাবরের আমলে হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে এই মসজিদ তৈরি করা হয়।

১৮৫৯: ব্রিটিশ প্রশাসন বাবরি মসজিদ চত্বরে পাঁচিল তুলে দেয়। মসজিদের ভিতরে মুসলিমদের এবং বাইরের চত্বরে হিন্দুদের প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৪৯: ডিসেম্বরের শেষে মসজিদের ভিতরে রামের মূর্তি দেখা যায়। অভিযোগ ওঠে হিন্দুরা মূর্তিটি রেখেছে। এই নিয়ে দুই সম্প্রদায় তীব্র প্রকিবাদ জানান। মুসলিমদের পক্ষে মামলা করেন হাশিম আনসারি। হিন্দুদের পক্ষে মামলা করেন মহন্ত রামচন্দ্র দাস। সরকার স্থানটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে মসজিদের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

১৯৫০: রামের মূর্তির সামনে প্রার্থনার অনুমতি চেয়ে রামজন্মভূমি ন্যাস-এর প্রধান মহন্ত রামচন্দ্র দাস এবং গোপাল সিংহ বিশারদ ফৈজাবাদে আদালতে একটি মামলা করেন। পুজোর অনুমতি দেওয়া হলেও মসজিদের ভিতরের চত্বরের গেট বন্ধ রাখার নির্দেশ বহাল থাকে।

১৯৫৯: নির্মোহী আখাড়া ওই স্থানে প্রার্থনার অনুমতি চেয়ে ফের মামলা করে।

আরও পড়ুন: বাবরি কাণ্ডে আডবাণী-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা বহাল

১৯৬১: উত্তরপ্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল বোর্ড অব ওয়াকফ দাবি করে মসজিদের আশপাশে কবরস্থান রয়েছে।

১৯৮৪: আন্দোলন জারি রাখার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে একটি দল গঠন করে।

১৯৮৬: ফৈজাবাদের জেলা আদালত হিন্দুদের প্রার্থনার জন্য মসজিদের গেট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরই বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৮৯: বাবরি মসজিদের পাশেই রামমন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। মসজিদ অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে মামলা করেন ভিএইচপি-র প্রাক্তন সহ-সভাপতি বিচারপতি দেওকি নন্দন অগ্রবাল। বাবরি নিয়ে যে চারটি মামলা ফৈজাবাদ আদালতে ঝুলছিল, সেগুলো ইলাহাবাদ আদালতের স্পেশাল বেঞ্চের কাছে পাঠানো হয়।

১৯৯০: বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা মসজিদের কিছু অংশ ধ্বংস করে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর মধ্যস্থতা করে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ২৫ সেপ্টেম্বরে লালকৃষ্ণ আডবাণী গুজরাতের সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা করেন। রামমন্দির নিয়ে প্রচার করেন। নভেম্বরে বিহারের সমস্তিপুরে আডবাণীর রথ আটরানো হয়। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

১৯৯১: বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসার পর রামমন্দির আন্দোলন আরও বেগ পায়। প্রচুর করসেবক ও স্বেচ্ছাসেবীরা অযোধ্যায় হাজির হন।

১৯৯২: ৬ ডিসেম্বর কয়েকশো করসেবক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। দেশজুড়ে হিংসা ছড়ায়। মৃত্যু হয় ২ হাজারেরও বেশি মানুষের। পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সরকার ১৬ ডিসেম্বর বিচারপতি এম এস লিবারহান এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

২০০৩: মসজিদস্থলে আদৌ কোনও মন্দির ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-কে নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। খনন করে দেখার পর এএসআই আদালতকে রিপোর্ট দেয় মসজিদস্থলের নীচে দশ শতকের মন্দির রয়েছে। অগস্টে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এএসআই-এর রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

২০১০: বিতর্কিত জায়গাটিকে তিনটি অংশে ভাগ করা হবে বলে নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। এক তৃতীয়াংশ রাম লালার, এক তৃতীয়াংশ ওয়াকফ বোর্ডের। এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখাড়া-র জন্য নির্ধারিত হয়। ডিসেম্বরে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়।

২০১১: হাইকোর্টের নির্দেশিত জমি বিভাজনের বিষয়টি স্থগিত করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

২০১৫: বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ঘোষণা করে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য পাথর সংগ্রহ করার কাজ চলছে। মহন্ত নৃত্য গোপাল দাস দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার রাম মন্দির নির্মাণের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।

২০১৭: মার্চে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় আডবাণী-সহ এই মামলায় জড়িত বাকি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা তুলে নেওয়া যাবে না। সংবেদনশীল ইস্যু হওয়ার কারণে বিষয়টি আদালতের বাইরেই মিটিয়ে নেওয়া উচিত বলে জানায় শীর্ষ আদালত। এপ্রিলে সিবিআইয়ের আর্জিতে সাড়া দিয়ে আডবাণী-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা বহাল রাখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE