রাস্তায় আটকে পড়া পুণ্যার্থীরা। ছবি: এএফপি।
উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে ভূমিধসে এখনও আটকে কয়েক হাজার হাজার পুণ্যার্থী। তাঁদের নিরাপদ স্থানে ফেরানোর ব্যবস্থা জোর কদমে চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর কর্মীরা রাতভর কাজ চালিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন। তবে বড় বড় বোল্ডার সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে ফের যান চলাচলের ব্যবস্থা করতে শনিবার সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে বলে বিআরও সূত্রে জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ১৮০০ পুণ্যার্থী এই ধসের ফলে আটকে রয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় ১৪ হাজার পুণ্যার্থী এই ধসের কারণে প্রভাবিত হয়েছেন।
শুক্রবার বেলা ২টো নাগাদ হঠাত্ই বিষ্ণুপ্রয়াগের কাছে হাতি পর্বত থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে বিশাল ধস। জোশীমঠ থেকে বদ্রীনাথ যাওয়ার রাস্তায় বড় বড় পাথর এসে পড়ায় রাস্তা পুরো বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দু’প্রান্তে আটকে পড়েন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। আটকে পড়া পুণ্যার্থীদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় তার জন্য তাঁদের খাবার-পানীয় এবং থাকার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পীযূষ রৌতেলা জানান, খাদ্য-পানীয়ের মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীগুলো ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুলভূষণ মামলায় এ বার কৌঁসুলি বদলাবে পাকিস্তান
দেখুন সেই ভিডিও
বিআরও সূত্রে জানানো হায়েছে, এই ধসে জাতীয় সড়কের প্রায় ৬০ মিটার অংশ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চামোলির পুলিশ সুপার তৃপ্তি ভট্ট জানিয়েছেন, ভূমিধসের পর অন্ততপক্ষে ১,১৮৩ পুণ্যার্থীকে গোবিন্দগাটে, ৯০০ জনকে জোশীমঠে এবং ৪৫০ জনকে পাণ্ডুকেশ্বরে আটকে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের থাকা-খাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল, গুরুদ্বার, লজ এবং গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভূমিধসের সময় প্রায় ১১ হাজার পুণ্যার্থী চার ধাম দর্শনে ছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার। আবার জেলাশাসক আশিস জোশী জানান, রাস্তায় আটকে পড়ে মোট ১,৮০০ পুণ্যার্থীর জন্য ইতিমধ্যেই সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়ে জেলা প্রশাসন। তিনি আরও জানান, ওই সব এলাকায় হোটেল, লজ এবং গেস্ট হাউস মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ধস সরানোর কাজ চলছে বিষ্ণুপ্রয়াগে।
বদ্রীনাথের দিক থেকে যে সব গাড়িগুলো আসছে সেগুলোকে বদ্রীনাথেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, বিষ্ণুপ্রয়াগ থেকে বদ্রীনাথে যাওয়ার গাড়িগুলোকে জোশীমঠে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। আইজি আইনশৃঙ্খলা দীপম শেঠের দাবি, ধসের নীচে কোনও গাড়ি বা পুণ্যার্থী চাপা পড়েনি বা আটকেও নেই। বিআরও কম্যান্ড্যান্ট কর্নেল রাম সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “বিশাল বড় বড় পাথর পাহাড় বেয়ে রাস্তায় মেনে এসেছে। আর্থ মুভার দিয়ে সেগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চামোলিতে পৌঁছেছেন গাঢ়বালের কমিশনার বিনোদ শর্মা এবং দেহরাদূন থেকে পৌঁছেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব অমিত নেগি।
বিষ্ণুপ্রয়াগে আটকে পড়া পর্যটকরা।
ভূমিধস, হড়পা বানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে স্বাভাবিক ঘটনা। ২০১৩-য় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হড়পা বানে কেদারনাথে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার স্মৃতি আজও ফিকে হয়ে যায়নি। ওই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে চার বছর। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে কেদারনাথ। প্রতি বছর এই সময় লাখ লাখ পুণ্যার্থী ‘চার ধাম’ যাত্রায় যান। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী— এই চারটি স্থানকে এক সঙ্গে চার ধাম যাত্রা বলা হয়।
ছবি: পিটিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy