Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

রঙের খেলায় চমক সোনালি বেড়ালদের

অরুণাচলপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অরণ্য সরকারি নজরদারির বাইরে। সেখানকার উঁচু পাহাড়, ঘন অরণ্যে ঠিক কি কি পশুপাখি, সরীসৃপ মেলে তার কোনও সুমারি সম্ভব হয়নি।

নানা রূপে একই প্রজাতি। অরুণাচলের দিবাং উপত্যকায়। ছবি জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের সৌজন্যে।

নানা রূপে একই প্রজাতি। অরুণাচলের দিবাং উপত্যকায়। ছবি জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের সৌজন্যে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

একই জঙ্গলে একই প্রজাতির বিড়াল, অথচ ছ’রকমের গাযের রং। বাঁচার তাগিদে, টিকে থাকার লড়াইয়ের ফলেই একই প্রজাতির বিড়ালের এমন ভিন্ন ভিন্ন গায়ের রঙ ও নকশা প্রাণীবিজ্ঞানীদের অবাক করেছে। ফলে ফের সংবাদ শিরোনামে অরুণাচলপ্রদেশের দিবাং উপত্যকা।

অরুণাচলপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অরণ্য সরকারি নজরদারির বাইরে। সেখানকার উঁচু পাহাড়, ঘন অরণ্যে ঠিক কি কি পশুপাখি, সরীসৃপ মেলে তার কোনও সুমারি সম্ভব হয়নি। দিবাং উপত্যকায় রয়্যাল বেঙ্গল মিলেছে। তুষার বাঘও দেখা গিয়েছে। মেঘলা চিতাবাঘ তো আছেই। বছর কয়েক আগে দিবাংয়ের জঙ্গলে জংলি বেড়ালদের নিয়ে গবেষণা করতে ট্র্যাপ-ক্যামেরা পেতেছিল লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটি ও ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪০০-৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২২০টি স্থানে ক্যামেরা পাতা হয়। ক্যামেরায় ধরা পড়ে ছ'রকম বিড়ালের ছবি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, সব কটি বিড়ালই আদতে ‘এশিয়াটিক গোল্ডেন ক্যাট’।

ক্যামেরায় পাওয়া ছবি পরীক্ষা করে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় সিনামন, চার হাজার মিটারে গ্রে ও ওসেলট সোনালি বিড়াল এবং পাঁচশ থেকে হাজার মিটারে মেলানিস্টিক (কালো), গোল্ডেন ও চিতাবাঘের ছোপের আদলে ঘন ছোপ বিশিষ্ট নতুন রঙের সোনালি বেড়ালে ‘টাইটলি রোসেটেড’-এর সন্ধান মিলেছে। লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটি ছাড়াও ‘ইকোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা’-র জার্নালেও বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

একটি প্রজাতি কত দ্রুত নিজেদের গায়ের রঙ বদলে ফেলতে পারে এবং তারপরেও একই এলাকা ভাগাভাগি করে থাকতে পারে, দিবাংয়ের এশিয়াটিক গোল্ডেন বিড়ালরা সেই নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে দিল বলে মনে করছেন ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির ফেলো সাহিল নিঝাওয়ান। তাঁর মতে, ‘‘জেডএসএলের হাতে আসা ছবি উত্তরের চেয়ে বেশি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।’’ একে ঐতিহাসিক আবিষ্কার বলে মনে করছেন তাঁরা। একটি প্রজাতির উপরে পরিবেশ পরিবর্তন, বিচরণক্ষেত্রের চরিত্র বদল ও অরণ্য ধ্বংসের কত অভিনব প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে প্রাণী বিজ্ঞানীদের গবেষণার নতুন খোরাক জুগিয়েছে দিবাংয়ে বেড়ালরা।

জেডএসএলের মতে, পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতা ও জঙ্গলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিজেদের গায়ের রঙ ও নকশা বদলেছে সোনালি বেড়ালরা। ট্রপিক্যাল ফেজ্যান্ট বা হিমালয়ান পাইকা (খরগোশ ধাঁচের প্রাণী) শিকার করতে এই ক্যামোফ্লেজ তাদের সাহায্য করে।

সাহিল জানান, সাধারণত কালার মর্ফ বা রঙবদল জিনগত মিউটেশনের ফলে হয় এবং প্রকৃতিই ঠিক করে দেয় কোনও ধরণের রঙ টিকে থাকবে। কোনও বিশেষ রঙ বেশিদিন লড়াইয়ে টিকে থাকার কাজে না এলে আপনা থেকেই তা হারিয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, দিবাংয়ে রাতে শিকার ধরার ক্ষেত্রে বাঘ, চিতাবাঘ ও মেঘলা চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্যই সোনালি বেড়ালদের রঙবদল বেশি হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cat Arunachal Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy