তিন সদস্যের প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কলিফুল্লা (বাঁ দিকে)। থাকছেন রবিশঙ্কর (মাঝখানে) ও শ্রীরাম পঞ্চু (ডান দিকে)।
চেষ্টা আগেও হয়েছে। ফল মেলেনি। দেশের সব থেকে স্পর্শকাতর জমি বিবাদ— অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা আরও এক বার মধ্যস্থতার মাধ্যমে মেটাতে উদ্যোগী হল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এই লক্ষ্যে তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করেছে। প্যানেলের মাথায় থাকবেন প্রাক্তন বিচারপতি এফ এম কলিফুল্লা। বাকি দুই সদস্য হলেন, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর ও প্রবীণ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু।
কোর্টের নির্দেশ, এক সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতা শুরু করে আট সপ্তাহের মধ্যে তা সেরে ফেলতে হবে। অর্থাৎ, লোকসভা ভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে উঠবে, ঠিক তখনই অযোধ্যা-বিবাদ নিষ্পত্তির চেষ্টা হবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এই মধ্যস্থতা কি রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে না? বিশেষ করে বিতর্কিত ভূমি যেখানে অবস্থিত, সেই ফৈজাবাদে বসেই যখন মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া চলবে।
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য গোটা সালিশি প্রক্রিয়া গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান সংগঠনগুলির কেউই এ নিয়ে বাইরে মুখ খুলতে পারবে না। আর বিজেপি সূত্রের দাবি, তারা এমনিতেই রামমন্দিরকে ভোটের ইস্যু করতে চাইছে না। কারণ উগ্র হিন্দুত্বের ধুয়ো বিশেষ প্রভাব ফেলছে না। তার থেকে পুলওয়ামার পরে জাতীয়তাবাদী আবেগ বেশি কাজে লাগছে। রামমন্দির আবেগ সত্যিই কাজে লাগলে, সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও মোদী সরকার অধ্যাদেশ আনত।
আরও পড়ুন: মধ্যস্থতায় কেন রবিশঙ্কর, উঠছে প্রশ্ন
আরও পড়ুন: রাফাল ফাইল নিয়ে উল্টো সুর বেণুগোপালের, বললেন, চুরি নয়, ফোটোকপি!
কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদেরও বক্তব্য, ‘‘এক দিকে গোপন মধ্যস্থতা, অন্য দিকে তার জন্য আট সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একে কেউ কাজে লাগাতে পারবে না। যা হবে ভোটের পরে।’’
বর্তমান সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতিরা আগেই বলেছেন, তাঁরা অযোধ্যার ২.৭৭ একর জমি ঘিরে লড়াইকে নিছক জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদ হিসেবে দেখতে চান না। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রশ্ন জড়িত। তাই মধ্যস্থতার মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করতে চান। যদিও আইনজীবীদের মতে, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে সব সময়ই হিন্দু পক্ষের পাল্লা ভারী থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ প্রথমেই হিন্দু পক্ষ বিশ্বাসের প্রশ্নে চলে যান। বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীর বক্তব্য, তিনি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন। কিন্তু রামকে তাঁর জন্মস্থান থেকে কেউ হঠাতে পারবে না। সেখানেই রামমন্দির তৈরি করতে হবে। আইনজীবীরা বলছেন, হিন্দুরা এ হেন অনড় অবস্থান নিলে মুসলিম শিবিরের পক্ষে বাবরি মসজিদ নিয়ে পিছু হটা ছাড়া কার্যত আর সমঝোতার রাস্তা খোলা থাকে না।
• মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে।
• সমস্ত ব্যবস্থা করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
• তিন জনের প্যানেল। প্রয়োজনে প্যানেল নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারে।
• ৭ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতা শুরু করে শেষ করতে হবে আট সপ্তাহে।
• ৪ সপ্তাহের মধ্যে কোর্টে অগ্রগতি জানাতে হবে।
• সংবাদমাধ্যমে মধ্যস্থতা নিয়ে খবর বেরোনো উচিত নয়। এ বিষয়ে প্যানেলই নির্দেশ জারি করবে।
• দেওয়ানি কার্যবিধি অনুযায়ী সমঝোতা হলে আদালত তা নথিবদ্ধ করে। সেই সমঝোতা কার্যকর করতে ডিক্রি জারি করে।
• সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।
• আগেও মধ্যস্থতার চেষ্টা সফল হয়নি। এ বার?
• মধ্যস্থদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সব পক্ষ তাঁদের কথা মানবেন তো?
• সমঝোতা হলেও, পরে তা চ্যালেঞ্জ করে কেউ আদালতে গেলে কী হবে?
• সমঝোতা হলেও তা দুই সম্প্রদায়ের সব মানুষ মেনে নেবেন কি?
সরকারি ভাবে বিজেপির অবস্থান হল, সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু দলের ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা মনে করছেন, এর আগেও চার বার মধ্যস্থতার চেষ্টায় লাভ হয়নি। নরসিংহ রাও, চন্দ্রশেখররা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিলেন। পরে কখনও কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য, কখনও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, কখনও শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর উদ্যোগী হয়েছেন। এ বার সুপ্রিম কোর্ট সময় বেঁধে দিলেও, বিবাদ মিটবে এমনটা কেউই আশা করছেন না।
অন্য দিকে আরএসএস আজ গ্বালিয়রে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে বার্ষিক সভায় প্রস্তাব এনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে ‘আশ্চর্যজনক’ আখ্যা দিয়েছে। সঙ্ঘের অভিযোগ, এমন স্পর্শকাতর ও হিন্দু সমাজের বিশ্বাসের বিষয়কে কোর্ট কেন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, তা তাদের বোধগম্য নয়। কিন্তু ভাগবত নিজেই কুম্ভে সাধুদের ধর্ম সংসদে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য রামমন্দির আন্দোলনে চার মাস বিরতি থাকবে। কারণ, তাঁরা মন্দিরকে রাজনীতির ইস্যু করতে চান না। সাধুরাও এই সরকারের জমানায় রাম মন্দিরের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy