দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাংলোয় হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধারের ঘটনায় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্ট তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি বর্মার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন আইন মহলের অনেকেই। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন বিচারপতি বর্মার বদলির সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
২০২১ সালে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে দিল্লি হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বিচারপতি বর্মা। বর্তমানে সিনিয়রিটির নিরিখে দিল্লি হাই কোর্টে তিনি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। গত সপ্তাহে দোলের ছুটি চলাকালীন তাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধার করা হয় বলে অভিযোগ। বিচারপতির সরকারি বাংলোয় আগুন লেগে গিয়েছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যেরাই দমকল ডেকেছিলেন। দমকলের কর্মীরা বাড়িতে ‘টাকার পাহাড়’ দেখতে পান। ওই সময়ে বিচারপতি বর্মা শহরে ছিলেন না। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে কলেজিয়াম আলোচনায় বসে। তারাই বিচারপতির বদলির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সূত্রের খবর, কলেজিয়ামের অনেকেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাঁরা চান, বিচারপতি বর্মা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। তা না-হলে তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। শুক্রবার সকাল থেকে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, হাই কোর্টের কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে একটি রিপোর্ট জমা দিতে হয় শীর্ষ আদালতে। আপাতত সেই রিপোর্টই চাওয়া হয়েছে।
শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টে বসেনি বিচারপতি বর্মার এজলাস। ওই বেঞ্চের বিচারপতিরা ছুটিতে আছেন বলে জানানো হয়। প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী। তিনি জানান, এই ঘটনায় তাঁরা স্তম্ভিত এবং হতাশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলেও জানান আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি তাঁর মন্তব্যে সায় দিয়েছেন।
বর্ষীয়ান আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ দাবি করেছেন, বিচারপতি বর্মার বাংলো থেকে কত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, অবিলম্বে তা প্রকাশ্যে আনা উচিত। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন বিচারপতি বর্মার বদলির বিরোধিতা করে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিস্মিত। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘ইলাহাবাদ হাই কোর্ট আবর্জনার পাত্র নয়।’’
শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও হাই কোর্টের বিচারপতির কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের অভিযোগ থাকলে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের রিপোর্ট দেখার পর আগে অভিযুক্তের কাছ থেকে জবাব চাইবেন। জবাবে তিনি সন্তুষ্ট না-হলে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের এক জন এবং যে কোনও দুই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকবেন। তাঁদের রিপোর্ট দেখে দেশের প্রধান বিচারপতির যদি মনে হয় শাস্তি দেওয়া উচিত, তা হলে তিনি ওই বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলবেন। এর পরেও বিচারপতি যদি পদত্যাগে রাজি না-হন, তবে সংসদের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারকে চিঠি লিখতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) ধারা অনুযায়ী, সংসদের মাধ্যমে হাই কোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করা যায়।