ছুটিতে পাঠানো সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত দু’সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)-কে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্বচ্ছতার স্বার্থে ওই তদন্তের উপরে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক নজরদারি করবেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। তদন্ত চলাকালীন ক্ষমতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাওয়ের। এই মামলার পরের শুনানি হবে ১২ নভেম্বর।
সিবিআইয়ের অধিকর্তা অলোক বর্মা ও বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার দ্বৈরথ প্রকাশ্যে চলে আসায় দুই শীর্ষ কর্তাকেই গত ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে ছুটিতে পাঠায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। সিদ্ধান্তের পিছনে সিভিসি-র সুপারিশকেই হাতিয়ার করে কেন্দ্র। যে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বর্মা। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল এবং কে এম জোসেফের বেঞ্চে আজ ওই মামলার শুনানি হয়।
বর্মার ধাঁচেই সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানাও তাঁকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আস্থানার আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতকে বলেন, ‘‘শুধু বর্মার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েই শুনানি হওয়ায় উচিত নয়। আস্থানার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগেরও তদন্ত হওয়া উচিত।’’ প্রধান বিচারপতি গগৈ এতে বলেন, ‘‘আমরা শুধু বর্মার বিষয়টি দেখছি।’’ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এর পরে রোহতগিকে বলে, এত দেরিতে আবেদন কেন? আমরা আজ এটি শুনতে পারব না। কারণ আবেদনটি এ দিনের শুনানির তালিকায় নেই। অন্য কোনও দিন ওই মামলার শুনানি হবে।’’
‘হাইপ্রোফাইল’ মামলা। সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা ছিল প্রধান বিচারপতির এজলাস। বেলা সওয়া এগারোটায় শুরু হয় শুনানি। বর্মার আইনজীবী ফলি এস নরিম্যান, দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট আইনের ৪এ-ধারার ব্যাখ্যা করে জানান, সিবিআই প্রধানের মেয়াদ থাকে দু’বছর। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাঁকে এ ভাবে সরানো যায় না। কারণ, তাঁকে নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কলেজিয়াম। সরাতে গেলেও ওই কলেজিয়ামের বৈঠক প্রয়োজন। তাই বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বেআইনি। পাল্টা যুক্তিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা বলেন, ‘‘সিবিআই প্রধানকে সরানো হয়নি। তিনি এখনও ওই সংস্থার প্রধান। তাঁকে শুধু ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।’’ বেঞ্চ জানতে চায়, কী কারণে সিবিআই প্রধানকে ছুটিতে পাঠানো হল কেন্দ্র তার ব্যাখ্যা দিক।’’
দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে তিন সদস্যের বেঞ্চ প্রথমে জানায়, সিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকেই তার তদন্ত করছে সিভিসি। আগামী দশ দিনের মধ্যে সিভিসি সেই তদন্ত শেষ করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিক। মাঝে দীপাবলির ছুটি থাকায় দশ দিনে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানান সরকার পক্ষের আইনজীবী তুষার মেটা। যা শুনে আদালত জানায়, বিষয়টির সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে বেশি বিলম্ব করা সম্ভব নয়। দু’সপ্তাহের মধ্যে সিভিসি-কে ওই তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয় আদালত।
তদন্ত ঘিরে যাতে প্রশ্ন না ওঠে এবং তা সময়ে শেষ করতে সিভিসি-র উপরে নজরদারি রাখতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ কে পট্টনায়ককে নিয়োগ করে আদালত। কেন বিচারপতি পট্টনায়ককে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হল, তার ব্যাখ্যায় আদালত জানিয়েছে, সিভিসি-র তদন্তে নজরদারি করতে প্রাক্তন বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা এক কথায় ব্যতিক্রমী। কিন্তু এই মামলায় যে বিচিত্র ধরনের তথ্য উঠে এসেছে, তাতে ওই নিয়োগ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলেই মনে করছে আদালত। ওই সিদ্ধান্ত দেখে এটা যেন মনে না করা হয় যে, ভারত সরকারের কর্তৃত্বে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।
অন্তর্বর্তীকালীন অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাওয়ের কাজের পরিধিও আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, তদন্ত চলাকালীন রাও কেবল রুটিন সিদ্ধান্তই নিতে পারবেন। কোনও নীতিগত বা বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকবে না। রাও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অর্থাৎ গত ২৩ অক্টোবর থেকে যে সিদ্ধান্তগুলি তিনি নিয়েছেন, যেমন তদন্তকারী অফিসারের বদলি, তদন্ত কমিটিতে অফিসারর পরিবর্তন— সেগুলি সম্বন্ধেও বিশদে জানাতে হবে ১২ নভেম্বরের আগে। মুখ বন্ধ খামে তা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy