অলোক বর্মা
মাত্র এক ঘণ্টা দেরির কথা বলে ছুটিতে পাঠানো সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার ভাগ্য আরও চার দিন ঝুলিয়ে রাখতে সক্ষম হল সরকার।
কংগ্রেসের আশঙ্কা, আগামী বছর জানুয়ারিতে বর্মার অবসর পর্যন্ত গোটা মামলাটিই ঝুলিয়ে রাখার কৌশল রচনা করছেন না তো নরেন্দ্র মোদী?
বিরোধী শিবিরে এই সংশয় তৈরি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা নিয়ে গোটা কাণ্ড দেখে। গত মাসের ২৬ তারিখ শীর্ষ আদালত বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত দু’সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে (সিভিসি)। সেই রিপোর্ট পাওয়ার জন্য গত কাল রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত দফতর খুলে রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু আজ সকালেই সেটি বন্ধ খামে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউলের হাতে তুলে দেয় সিভিসি। সিভিসির হয়ে আদালতকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা জানান, কাল রাতেই তাঁরা রিপোর্ট জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়।
যা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সব রেজিস্ট্রাররা বসেছিলেন গত কাল রাতে। আপনাদের দেরি হবে, সেটা তো জানাননি।’’ এর পরেই তুষার মেটা ক্ষমা চেয়ে নেন ও আদালত ফের শুক্রবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করে। ফলে অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত সিবিআই ডিরেক্টর পদে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব পাওয়া এম নাগেশ্বর রাওই বহাল থাকবেন পদে। আজ সিবিআই-এর পক্ষ থেকেও আদালতকে জানানো হয়, রাও এযাবৎ কী কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু মামলাকারী ‘কমন কজ’-এর আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে ও পরে প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তুলেছেন, রাত দুটো পর্যন্ত অফিস খুলে রেখে সরকার যদি সিবিআই প্রধানকে সরানোর নির্দেশ জারি করতে পারে, তা হলে রাতে রিপোর্ট জমা করতে পারবে না কেন? বিরোধীদের আশঙ্কা, সিভিসি আজ মামলা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। শুক্রবারও মামলা পিছনোর অন্য কোনও অজুহাত নিয়ে আসতে পারে তারা।
বিরোধীদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে সরকার কেন মামলা পিছোতে চাইছে? বিজেপির এক সূত্রের মতে, অলোক বর্মা ও ছুটিতে পাঠানো স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিবাদ মেটানো নিয়ে সরকারের ভিতরেই দুটি মত রয়েছে। দুই অফিসারের ঝামেলার মধ্যে সরকার নাক গলাবে না, তদন্তে যা হবে তাই হোক— এমন একটি প্রকাশ্য অবস্থান ইতিমধ্যেই নেওয়া শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। কিন্তু ভোটের আগে আস্থানার পক্ষে সরকার রয়েছে, এমন বার্তায় বিরোধীদের হাত শক্ত হবে। আবার আস্থানাকে অবজ্ঞা করলেও তিনি বেঁকে বসতে পারেন, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
এই অবস্থায় আরও সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থে চলারই কৌশল নিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী আজ সারাদিন দিল্লির বাইরে ছিলেন। ফলে তিনি ফিরলে এই নিয়ে কৌশল রচনা হতে পারে বলে বিজেপির ইঙ্গিত। সরকারের এক সূত্রের দাবি, সিভিসি আদালতকে দেওয়া রিপোর্টে কাউকেই ক্লিনচিট দেয়নি। বরং জানিয়েছে, এই নিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট গোটা তদন্ত নজরদারি করার জন্য শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি এ কে পট্টনায়ককে নিয়োগ করেছে। কোন পথে তদন্তের গতি এগিয়েছে, সেটি শীর্ষ আদালতকেও জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে দুষ্মন্ত দাভে আজ আদালতকে জানান, সিবিআই-এর কার্যনির্বাহী ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাও বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের তদন্তকারী অফিসারদের বদল করা হয়েছে। বিচারপতি কউল বলেন, এই সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই চাওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা যদি আপনার জানা থাকে, আমাদের জানান।’’ যদিও সরকারের এক সূত্রের মতে, সিবিআই ডিরেক্টরের অনেক ধরনের দায়িত্ব থাকে। আদালতে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্তের আওতায় আসে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy