Advertisement
E-Paper

সমকামিতা থেকে মোদী সরকারের সমালোচনা! বিচারপতি নিয়োগে বাগড়া দিতে নানা অছিলা কেন্দ্রের?

সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম জানিয়েছে, দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী সৌরভ কৃপাল সমকামী বলেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তাঁকে হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে আপত্তি তুলেছিল।

বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্রের ‘মাপকাঠি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম।

বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্রের ‘মাপকাঠি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:১৮
Share
Save

গত কয়েক মাস ধরেই বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ধারাবাহিক ভাবে সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদী জমানায় কলেজিয়াম ব্যবস্থা বাতিল করার উদ্দেশ্যে সংসদে পাশ হওয়া জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন (এনজেএসি) আইনকে সুপ্রিম কোর্ট কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করল তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও। এই আবহে এ বার আইন মন্ত্রক কলেজিয়ামের সুপারিশ করা কয়েক জন আইনজীবীকে কোন কারণে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে চাইছে না, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম তা প্রকাশ্যে জানাল।

শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী সৌরভ কৃপাল সমকামী বলেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তাঁকে হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে আপত্তি তুলেছিল। মাদ্রাজ হাই কোর্টের আইনজীবী আর জন সথ্যান এবং বম্বে হাই কোর্টের আইনজীবী সোমশেখর সুন্দরেসন সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী সরকারের সমালোচনা করেছিলেন বলে আইন মন্ত্রকের আপত্তি ছিল। এই তথ্য প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার আইন মন্ত্রক প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে। এ নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার যে পছন্দের বিচারপতিদের দিয়ে আদালত ভরে তুলতে চাইছে, তা স্পষ্ট। মোদী সরকারের এই ‘মুখোশ খুলে দেওয়া’র জন্য বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় তথা কলেজিয়ামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আইনজীবীরা মনে করছেন, কলেজিয়াম কেন্দ্রকে পাল্টা তির ছুড়ল। দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষের মন্তব্য, ‘‘প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং কলেজিয়ামকে এ সব খোলসা করে দেওয়ার জন্য কুর্নিশ। এই সময়ে এটাও যথেষ্ট সাহসের কাজ।’’

প্রবীণ আইনজীবী, তৃণমূলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘মোদী সরকার আদালতে নিজের পছন্দের লোক বসিয়ে বিচারবিভাগকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। কারণ, বিচারবিভাগ এখনও তাঁদের অধরা। এই কারণেই ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে আপত্তি তুলে নিজেদের লোক চাইছেন তাঁরা। কেন্দ্রের লক্ষ্য, সংবিধানের মূল কাঠামোয় হস্তক্ষেপ করা। তাই তাঁরা কেশবানন্দ ভারতী মামলা, বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন মামলায় সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ও মানতে চাইছে না।’’

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রিজিজু কিছু দিন আগে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে দাবি তোলেন, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক ঝাড়াই-বাছাইয়ের জন্য ‘সার্চ-কাম-ইভ্যালুয়েশন কমিটি’-তে সরকারের প্রতিনিধিত্ব রাখা হোক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুদুচেরিতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ফের যুক্তি দিয়েছেন, বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্র ও রাজ্যের ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কারও নাম সুপারিশ করার অধিকার থাকা উচিত।

রিজিজু যখন এ কথা বলেন, ঠিক তার আগেই সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম চারটি প্রস্তাবে পাঁচ জন আইনজীবীকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ফের সুপারিশ করে। এই পাঁচ জনের নাম আগে সুপারিশ করা হলেও আইন মন্ত্রক কেন আপত্তি তুলেছে, তা-ও খোলসা করে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী সৌরভ কৃপাল সমকামী বলে ও তাঁর সঙ্গী সুইস নাগরিক বলে কেন্দ্রের আপত্তি। এ বিষয়ে ‘র’-এর রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘কেন এক জন ভারতীয় নাগরিকের যৌনতা নিয়ে গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ তদন্ত করছে, তা নিয়ে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত সুপ্রিম কোর্টের। এটা নাগরিক অধিকারে গুরুতর হস্তক্ষেপ।’’

সুন্দরেসন ও সথ্যানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আপত্তির কারণ, তাঁরা মোদী সরকারের সমালোচনামূলক খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছিলেন বা নিজেরাই এক বার সমালোচনা করেছিলেন। কলকাতার আইনজীবী শাক্য সেন ও অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কোনও যুক্তিই দেখাতে পারেনি কেন্দ্র। সঞ্জয়ের মন্তব্য, ‘‘যে সব আইনজীবী বিচারপতি হতে চান, তাঁদের স্যরের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখা চলবে না।’’ এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সদস্য তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘‘সরকার যদি মনে করে, কলেজিয়াম ব্যবস্থায় বদল দরকার, তা হলে প্রকাশ্যে বিচারবিভাগকে কটাক্ষ না করে যথাযোগ্য স্থানে তা আলোচনা করা উচিত।’’

কলেজিয়ামের বক্তব্যে স্পষ্ট, যোগ্যতা এবং সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকা সত্ত্বেও কেন শুধুমাত্র যৌনসঙ্গী নির্বাচন বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের কারণেই সৌরভ-জন-সোমশেখরকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে কেন্দ্র। এমনকি, এ ক্ষেত্রে হাতিয়ার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি) রিপোর্টকেও। মোদী সরকারের ক্ষেত্রে এই ঘটনা অস্বস্তি বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।

Supreme Court Collegium SC Collegium Collegium Supreme Court Justice DY Chandrachud CJI CJI DY Chandrachud Kiren Rijiju

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}