শেষ এক বছরে প্রশাসনের তরফে জেলায় কত জন নাবালিকা বিয়ে আটকানো সম্ভব হয়েছে, সেই তথ্যই নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। আবার ওই তথ্য প্রকাশ্যে আনা যাবে না বলেও দাবি করেছেন প্রশাসনের কর্তাদের কেউ কেউ।
প্রত্য়াশিত ভাবেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জেলাতেই রয়েছে শিশু সুরক্ষা দফতর। রয়েছে শিশু কল্যাণ কমিটি, সমাজ কল্যাণ দফতরের মতো তিন তিনটি দফতর। তা সত্ত্বেও জেলায় নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। ফলে জেলার গ্রামীণ এলাকায় নাবালিকা বিয়ে রুখতে জেলা প্রশাসন কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেক আগে রানাঘাট ২ ব্লকের ধানতলায় এক নাবালিকা বিয়ে আটকানো নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সামনে আসে জেলা জুড়ে শেষ ১০ মাসে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সংখ্যাটা। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি প্রশাসনের তরফে জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না?
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০২২ সালে প্রায় ৩৯০টি ও ২০২৩ সালে প্রায় ৪৫০ জন নাবালিকা বিয়ে আটকাতে পেরেছে প্রশাসন। তবে ২০২৪ সালে কত জন নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে তার উত্তরে জেলা সমাজ দফতরের আধিকারিক শমিতা ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া যাবে না।’’ তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে দায় এড়িয়েছে জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরও।
২০২২-২৩ বছরে জেলায় ১১,১১২ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। পরের বছর সংখ্যাটা কিছুটা কমে হয় প্রায় সাড়ে সাত হাজার। আবার ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা জুড়ে আট হাজারেরও বেশি নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রসবকালীন সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মৃত্যুর ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে কম বয়সীদের মৃত্যুর হার বেশি। বিভিন্ন স্কুলে, জেলা, মহকুমা ও ব্লক প্রশাসন এমনকি পুলিশের তরফেও নাবালিকা বিয়ে রদ নিয়ে চলছে লাগাতার প্রচার অভিযান।
অথচ নাবালিকা বিয়ে আটকানোর গিয়েছে এমন তথ্য কই? নদিয়া জেলাশাসক এস অরুনপ্রসাদ বলেন, ‘‘সে ভাবে লিপিবদ্ধ তথ্য প্রশাসনের কাছে থাকে না।’’ জেলাশাসকের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে যখন যেমন নাবালিকা বিয়ের খবর আসে সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে নির্দিষ্ট করে কোনও পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয়।’’ যদিও ওয়াকিবহল মহলের দাবি, প্রতিটি জেলা থেকে রাজ্যস্তর হয়ে কেন্দ্রের কাছে নিয়ম করে শিশু সুরক্ষা, নাবালিকা বিয়ে, শিশু অপহরণ ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য জমা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের তথ্য না থাকার যুক্তি মানা সম্ভব নয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)