কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নামে ছাড়পত্র দিতে কেন্দ্র দেরি করছে বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কলেজিয়াম পদ্ধতির সাহায্যে বিচারপতি নিয়োগের বর্তমান ব্যবস্থা বদলের পক্ষে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সম্প্রতি ধারাবাহিক ভাবে যে মন্তব্য করছেন, সোমবার তাতে অসম্মতি জানাল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উচ্চ বিচারবিভাগীয় স্তরে বিচারপতি নিয়োগে গয়ংগচ্ছতার অভিযোগ তুলেছে। বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা নামে সম্মতি জানাতে সরকারের তরফে দেরি নিয়ে কেন্দ্রকে ভর্ৎসনাও করেছে শীর্ষ আদালত।
কলেজিয়াম পদ্ধতিতে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে বহু দিন ধরেই। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত ওই কলেজিয়ামই সম্ভাব্য বিচারপতিদের নাম সুপারিশ করে। তার পরে সেই নামগুলি বিবেচনা করে সরকার। কলেজিয়ামের পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার নাম ফেরত পাঠাতে পারে। কিন্তু কলেজিয়াম সেই নামগুলি ফেরত পাঠালে সরকার তা মানতে বাধ্য। কয়েক মাস আগে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় রিজিজু বলেছিলেন, ‘‘যে পদ্ধতিতে কাজ চলছে তাতে যে সমস্যা হচ্ছে তা সবাই জানেন। কী করা সম্ভব তা নিয়ে আরও আলোচনা করতে হবে।’’
এর পর সম্প্রতি প্রকাশ্যে রিজিজু অভিযোগ করেছিলেন, বর্তমান কলেজিয়াম ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা রয়েছে। এমনকি, বিচারপতি নিয়োগের এই ব্যবস্থাকে ‘ভারতীয় সংবিধানে বহিরাগত’ বলেন তিনি। সোমবার বিচারপতি এসকে কউল এবং বিচারপতি এএস ওকার বেঞ্চ বলেছে, ‘‘উচ্চ বিচারবিভাগীয় স্তরে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা হতাশাজনক। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ যে সময়সীমা নির্ধারিত করে দিয়েছিল তা মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, কলেজিয়াম সম্পর্কে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর মন্তব্য গ্রহণযোগ্য় নয়।
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকারের দাবি, কলেজিয়ামের মধ্যে যে নিয়োগ হচ্ছে, তাতে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। তা ছাড়া কেন্দ্রের পক্ষের যুক্তি, দেশের শীর্ষ আদালত এবং উচ্চ আদালতগুলিতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারেরই প্রধান ভূমিকা নেওয়া উচিত। অন্য দিকে, বিচার বিভাগের বড় অংশের অভিযোগ, প্রস্তাব পাঠানো হলেও নানা কারণে বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে সরকার। ফলে আদালতে তৈরি হচ্ছে শূন্যপদ, দীর্ঘায়িত হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া।
সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টগুলির বিচারপতিদের নিয়োগে দীর্ঘ দুই দশকের কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে ২০১৫ সালে পাল্টে দিয়েছিল কেন্দ্র। এ জন্য জাতীয় বিচারবিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (এনজেএসি) গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আর্জি দাখিল হওয়ায় বিষয়টি নয়া মোড় নেয়। তৎকালী প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, যত ক্ষণ না কমিশনের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তাঁদের সিদ্ধান্ত শোনাচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর পক্ষে নিয়োগ কমিশনের বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
এর পরে মোদী সরকার প্রধান বিচারপতির অবস্থান ঠিক করে দিতে সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে আর্জি জানিয়েছিল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এনজেএসি গড়ার ব্যবস্থাকে একেবারে বাতিল ঘোষণা করে কলেজিয়াম প্রথাই বহাল রাখার রায় দেয়। এর পর থেকেই বিচারপতি নিয়োগে শ্লথতার অভিযোগ উঠতে শুরু করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy