Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ayodhya Dispute

বাবরি-রাম মন্দির মামলা আপোসে মিটিয়ে নিতে বলল সুপ্রিম কোর্ট, কিন্তু…

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ১৬:০৬
Share: Save:

আদালতের বাইরে মিটিয়ে নেওয়া হোক রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক। পরামর্শ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর দায়ের করা মামলায় প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের পর্যবেক্ষণ— অযোধ্যার এই বিতর্ক একটি ‘ভাবাবেগের বিষয়’, এর মীমাংসা ‘শান্তিপূর্ণ’ আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। বিবদমান দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে আগ্রহী হলে তিনি নিজে মধ্যস্থতা করতে পারেন বলেও দেশের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ সব পক্ষের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।

প্রায় ২৫ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক। অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জমির মালিকানা কার, তা এত দিনেও নির্ধারণ করা যায়নি। ২০১০ সালে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এই মামলায় যে রায় দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট পরে তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। ইলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে জানিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত কাঠামোটির মূল গম্বুজের নীচে যে অংশ, সেই অংশেই রামের জন্ম হয়েছিল এবং সেখানে উপাসনার অধিকার হিন্দুদের রয়েছে। বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি এই রায় মানেনি। তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই থেকেই ফের ঝুলে রয়েছে বিতর্কের মীমাংসা।

আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের আগে পর্বত প্রমাণ কৃষি-ঋণ মাফে হিমশিম যোগী

বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এবং মামলাটির নিষ্পত্তির দাবি জানান। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই প্রধান বিচারপতি মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘এটা ধর্ম এবং ভাবাবেগের বিষয়। প্রথমে এক সঙ্গে বসুন এবং রফায় পৌঁছনোর চেষ্টা করুন। দু’পক্ষই মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করুন এবং বৈঠক করুন।’’ প্রয়োজন পড়লে তিনি নিজেও মধ্যস্থতা করবেন বলে প্রধান বিচারপতি জানান। আবেদনকারী বিজেপি নেতার দাবি ছিল, আদালতই রাম মন্দির তৈরির নির্দেশ দিক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর জানিয়েছেন, আলোচনায় যদি সমাধান সূত্র না মেলে, তা হলে আদালত পদক্ষেপ করবে।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের সঙ্গে যে পক্ষগুলি সরাসরি যুক্ত, তাদের অনেকের কাছেই কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ গ্রহণযোগ্য হয়নি। বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ কাসিম ইলিয়াস বলেছেন, ‘‘আলোচনা এবং মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে এবং আবার নতুন করে তা হওয়া সম্ভব নয়।’’ ইলিয়াস আরও বলেছেন, ‘‘ভারতের প্রধান বিচারপতি নিজে মধ্যস্থতা করবেন বলে যে প্রস্তাব এসেছে, তা আমরা মানতে পারছি না।’’ বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক জাফরিয়াব জিলানিও মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে রফাসূত্রে পৌঁছনো কঠিন। এত দিন ধরে যত আলোচনার ব্যবস্থা হয়েছে, তার কোনওটিই ফলপ্রসূ হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তবে প্রধান বিচারপতি নিজে মধ্যস্থতা করলে আলোচনায় আসতে তাঁর আপত্তি নেই বলেও জিলানি জানিয়েছেন।

রাম জন্মভূমি বিতর্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। আলোচনার মাধ্যমেই হোক বা আলাদতের রায়ে, কোনও কিছুতেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আপত্তি নেই। কিন্তু যে বিতর্কিত কাঠামোর যে অংশকে রামের জন্মস্থান বলে তাঁরা দাবি করেন, যে কোনও মূল্যে ওইখানেই রাম মন্দির গড়তে দিতে হবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা ঈশ্বরী প্রসাদ জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠন দেশের ২ লক্ষ গ্রামে ‘রাম মহোৎসব’ পালন করবে। তার মাধ্যমেই গোটা দেশে ফের নতুন করে রাম মন্দির আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলায় যিনি রামলালার কৌঁসুলি, সেই রঞ্জনা অগ্নিহোত্রীও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সন্তুষ্ট নন। রাম মন্দিরের পক্ষে রায় ছাড়া অন্য কোনও কিছু মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এই মামলায় যে রায় দিয়েছিল, তাতে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী বলেছেন, ‘‘জমিকে তিন ভাগে ভাগ করার রায়ই যখন আমরা মেনে নিইনি, তখন আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন?’’ অগ্নিহোত্রীর কথায়, ‘‘এত বছর যখন অপেক্ষা করেছি, তখন আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে পারব। কিন্তু আদালতকেই রায় দিতে হবে। যদি আদালতের পক্ষে রায় দেওয়া কঠিন হয়, তা হলে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাম মন্দির তৈরির পথ খুঁজে বার করতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE