ক্ষমতায় থাকার সময় থেকে তাদের দিকে আঙুল উঠছে বৃদ্ধতন্ত্র চালানোর জন্য! ক্ষমতা হারানোর পরে এখন ঠেকে শিখছে সিপিএম। এবং ঠেকায় পড়েই তারা এ বার মরিয়া হচ্ছে সংগঠনে তরুণ রক্ত আমদানির জন্য!
দলের যে কোনও স্তরের কমিটিতে তরুণ মুখের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তিন বছরের সময়সীমা ধার্য করে অভিযানে ঝাঁপাতে চলেছে সিপিএম। দলের আসন্ন সাংগঠনিক প্লেনামে পেশ করার জন্য খসড়া রিপোর্টে এ বার এমন লক্ষ্যই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রেই এ বার থেকে দলে তরুণ সদস্যের অনুপাত মোট সদস্যসংখ্যার ২০%-এর নীচে রাখা চলবে না। সবুজের অভিযান গতিময় করার জন্য প্লেনামের এক বছরের মধ্যেই যুবদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ঠিক করতে আলাদা নথিও তৈরি করার কথা বলে দেওয়া হয়েছে প্লেনামের সাংগঠনিক খসড়ায়। একই ভাবে জাতীয় স্তরে দলের মহিলা সদস্যের অনুপাত এখনকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে তিন বছরের মধ্যে ২৫%-এ তুলে নিয়ে য়াওয়ার লক্ষ্যও হাতে নেওয়া হচ্ছে। সোজা কথায়, যুব ও মহিলা মুখে গুরুত্ব দিয়েই সঙ্কটের সময়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাইছে সিপিএম।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন তারুণ্যের আকাল কেন? সংগঠনের সর্বস্তরেই কেন পুরনো মুখের এত ছড়াছড়ি? সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে ভূরি ভূরি চর্চা হলেও সাংগঠনিক ভাবে এ বারই প্রথম সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব আন্তরিক ভাবে এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমেছিলেন। প্লেনামকে সামনে রেখে পলিটব্যুরোর তরফে সবিস্তার প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছিল একেবারে শাখা স্তর পর্যন্ত। নিচু তলা থেকে যাবতীয় উত্তর রাজ্য কমিটি ঘুরে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে আসার পরে তারা প্লেনামের জন্য খসড়া তৈরি করেছে। সেখানে খোলাখুলিই মেমে নেওয়া হয়েছে, বাম দলগুলিতে যে ভাবে এবং যে ভাষায় আন্দোলনের কথা বলা হয়ে চলেছে, আজকের দিনে তা তরুণদের মন ছুঁতে খুব বেশি সফল হচ্ছে না। একেই যুগের ফেরে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়েছে নতুন প্রজন্মের বড় অংশ। সারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে সমাজতন্ত্রের রোমান্টিকতায় আকৃষ্ট হওয়ার দিনও নেই! তরুণদের যে অংশ রাজনীতিতে আসছে, তাদেরও টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে নানা ধরনের আঞ্চলিক, গোষ্ঠীগত এবং এমনকী, কিছু ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক শক্তিও। এর বাইরে বামেদের কর্মসূচি এবং প্রচারের ধরন তরুণ মুখ টানতে পারছে না।
কয়েক মাস আগে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, ‘‘যে দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগেরই বয়স চল্লিশের নীচে, সে দেশে তরুণ কর্মী ছাড়া কোনও দল চলতে পারে না!’’ দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরে তারুণ্যের আকাল কাটানোর দিকেই সব চেয়ে বেশি নজর দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন উঠে এসেছে প্লেনামের রিপোর্টে। যেখানে বলা হয়েছে, দলের সৈনিক উঠে আসে ছাত্র ও যুব ফ্রন্ট থেকে। অথচ বেশ কিছু বছর ধরে এই দু’টো শাখা সংগঠনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়নি। তাই সংগঠনের অন্যান্য স্তরে পুরনো মুখ থেকে যাওয়ার গড় মেয়াদও বেড়ে গিয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই।
খসড়ায় পরিষ্কার বলা হয়েছে: ‘তরুণ প্রজন্মের নজর টানতে পারবে, এমন ভাবেই দলের কর্মসূচি ও প্রচার সাজাতে হবে। ছাত্র ও যুব ফ্রন্টে সন্তোষজনক কাজ হচ্ছে না। এই দুই ফ্রন্টকে নতুন করে গড়ার দিকে নজর দিতে হবে’। যুবদের অনুপাত বাড়ানোর জন্য দু’রকমের দাওয়াইয়ের কথা ভাবছেন সিপিএম নেতৃত্ব। প্রথমত, নতুন নতুন মুখকে আকর্ষণ করার জন্য পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদেরও রাস্তার আন্দোলনে থাকতে হবে। যেটা ইদানীং কালে বাংলায় বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা করছেন। আর দ্বিতীয়ত, যে কোনও স্তরের কমিটি গড়ার সময়েই নতুনদের নির্দিষ্ট অনুপাত বেঁধে নিতে হবে। সেটা কত, চূড়ান্ত হতে পারে প্লেনামেই।
প্লেনামের আগে সিপিএমের নিজস্ব সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে, আলিমুদ্দিনের জন্য তা আরও অস্বস্তিকর। দেখা যাচ্ছে, তেলঙ্গানায় ২৫%, অন্ধ্রপ্রদেশে ২৪.৬% বা কেরলে ২২.৭% তরুণ সদস্য আছেন। অথচ বাংলায় ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও ওই অনুপাত মাত্র ১৩.৫%! যাকে সরাসরিই ‘অসন্তোষজনক’ বলে আখ্যা দিচ্ছে খসড়া রিপোর্ট! আবার মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই রকম করুণ ছবি। দিল্লিতে ২৬.৪%, ত্রিপুরায় ২৪.৬%, কর্নাটকে ২৪.৪% বা অসমে ২০.২% মহিলা সদস্য। আর যেখানে লড়াই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, সেখানে মহিলা কর্মীর সংখ্যা ১০.৪%! যে পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেনেই নিচ্ছেন, ‘‘বিশেষ অভিযানে না ঝাঁপালে তরুণ ও মহিলাদের এই অভাব মেটানো মুশকিল!’’
ব্রিগে়ড সমাবেশ দিয়ে আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে কলকাতায় শুরু হচ্ছে প্লেনাম। তার আগে আজ, বৃহস্পতি ও কাল, শুক্রবার দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক বসছে। যাকে বলা হচ্ছে রাজ্যের মিনি প্লেনাম! সেখানে থাকছেন স্বয়ং ইয়েচুরিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy