Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মিলছে ‘দিল’, জানল পটনা

প্রতিপক্ষ এক। একই মঞ্চে হাজির তিন প্রধান। পটনার ‘স্বাভিমান র‌্যালি’ থেকে কেবল বিহার বিধানসভা ভোট নয়, ভবিষ্যতেও একসঙ্গে চলার বার্তা দিতে চাইলেন সনিয়া গাঁধী, নীতীশ কুমার ও লালু প্রসাদ।

পাশাপাশি। রবিবার পটনার জনসভায় শ্যামলী দে-র তোলা ছবি।

পাশাপাশি। রবিবার পটনার জনসভায় শ্যামলী দে-র তোলা ছবি।

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

প্রতিপক্ষ এক। একই মঞ্চে হাজির তিন প্রধান। পটনার ‘স্বাভিমান র‌্যালি’ থেকে কেবল বিহার বিধানসভা ভোট নয়, ভবিষ্যতেও একসঙ্গে চলার বার্তা দিতে চাইলেন সনিয়া গাঁধী, নীতীশ কুমার ও লালু প্রসাদ। ধর্মনিরপেক্ষ মহাজোটের এই বৈঠক থেকে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেল বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে কংগ্রেস-আরজেডি-জেডিইউ জোটের অন্দরে।

বিহারের লড়াই যে ভবিষ্যতের সুরও বেঁধে দেবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই যুযুধান কোনও পক্ষেরই। তাই বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি নীতীশ-লালুকে তুলোধোনা করেছিলেন মোদী। জবাবে পাল্টা তোপ এসেছিল দুই বিহারি নেতার কাছ থেকে। লড়াইয়ে হাত মেলানোর পরে এই প্রথম এক মঞ্চে এলেন মোদী-বিরোধী জোটের তিন বড় মুখ। স্বভাবতই মঞ্চ থেকে মোদী তথা বিজেপির বিরুদ্ধে অস্ত্রে আরও শান দেওয়া হল। সেই সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা হল অতীতে যতই মতভেদ থাক, এখন জোটের নেতাদের ‘দিল’ মিলে গিয়েছে।

আজ সকাল থেকেই বিহারে নিজেদের শক্তি দেখাতে সচেষ্ট ছিল তিন দল। পটনা শহর কার্যত চলে গিয়েছিল জোটের কর্মী-সমর্থকদের হাতে। শুধু সভাস্থল গাঁধী ময়দান নয়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতেও মিছিল শুরু হয়। পটনা স্টেশন রোড থেকে শুরু করে বেলি রোড-সর্বত্রই ছিল সনিয়া-নীতীশ-লালুর সমর্থনে স্লোগান। আয়োজকদের দাবি, সভায় দশ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। পুলিশ জানাচ্ছে, শহরে এসেছিলেন দু’লক্ষ মানুষ। আর বিজেপির দাবি, যত লোকই এসে থাকুন, তাঁরা শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গাঁধী ময়দান ফাঁকাই ছিল। সভা ফ্লপ।

বিজেপি সরকারি ভাবে যা-ই বলুক, তিন প্রধানের সভায় যে দামামা বাজানোর জন্য যথেষ্ট ভিড় হয়েছে তা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন সকলেই। কেবল সনিয়া-লালু-নীতীশ নয়, মুলায়মের ভাই শিবপাল সিংহ যাদব ও রাজ্যসভা সাংসদ কিরণময় নন্দকে পাঠিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে সমাজবাদী পার্টিও। এই পরিস্থিতির ফায়দা নিতে মরিয়া ছিলেন জোটের নেতৃত্ব।

আক্রমণের লক্ষ্য এক হলেও কোথাও যেন প্রসঙ্গগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন সনিয়া-নীতীশ-লালু। জমি বিল, বিদেশনীতি, ললিত মোদী কাণ্ড, ব্যপম কেলেঙ্কারি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমা, বিজেপির সাম্প্রদায়িক কর্মসূচির মতো জাতীয় রাজনীতির বিষয়গুলি নিয়ে আক্রমণ করেছেন সনিয়া। বোঝাতে চেয়েছেন, কার্যকালের এক-চতুর্থাংশ জুড়ে ‘শো-বাজি’ ছাড়া কিছু করেননি মোদী। সেই সঙ্গে জোট শরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘কিছু মানুষ বিহারকে নিচু করতে ভালবাসেন। তাই এই রাজ্যকে অসুস্থ বলেন। ডিএনএ-তে গোলমাল দেখেন। বিহারের মানুষের আত্মসম্মান রক্ষার লড়াইয়ে যোগ দিতেই এসেছি।’’

নীতীশের রাজনৈতিক ডিএনএ-তে গণতন্ত্র না থাকার কথা বলেছিলেন মোদী। নীতীশ জমানায় ‘অসুস্থ’ বিহারে লালু-নীতীশের জোট যে ফের ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরিয়ে আনবে, তাও স্পষ্ট করেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারই কড়া জবাব দিচ্ছেন নীতীশ-লালু। জাগাতে চেয়েছেন বিহারি আত্মসম্মান ও জাতিগত ভোটের অঙ্ককে।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মোদীর বিহার প্যাকেজের ৮৭ শতাংশই পুরনো। আর তাঁর ডিএনএ বিহারের। যেখানে জন্ম হয়েছিল মহাবীর, গৌতম বুদ্ধ ও আর্যভট্টের। কর্মী-সমর্থকদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রায় ৮০টি কাউন্টার খোলা হয়েছিল। নীতীশ জানিয়েছেন, বিহারের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। আর লালু জানাচ্ছেন, দুই ‘পিছড়ে বর্গে’-র ছেলে এক হওয়ায় ঘাবড়ে গিয়েছে বিজেপি। জঙ্গলরাজ নয়, ফের মণ্ডলরাজের ভয় পাচ্ছে তারা। জাতিগত জনগণনার তথ্য প্রকাশের দাবি করে পুরনো জাতপাতের রাজনীতির অঙ্ক কষতে চেয়েছেন আরজেডি প্রধান।

এক জোট হলে যে মোদীকে আটকানো যায়, তা বোঝাতে জমি বিল নিয়ে কেন্দ্রের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন মহাজোটের নেতারা। আর কংগ্রেস যে রাহুল গাঁধীর ‘একলা চলো’ নীতি ছেড়ে জোট রাজনীতির খেলা খেলতে তৈরি, তাও জানাতে চেষ্টার কসুর করেননি সনিয়া।

রাজ্যটা বিহার, দুই প্রধান জয়প্রকাশ আন্দোলনের ফসল। তাই অনিবার্য ভাবেই গাঁধী ময়দান থেকে ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে জয়প্রকাশের জেহাদ শুরুর কথা বলেছেন নীতীশ। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে সেই লড়াইয়ের সঙ্গীরাই আজ মূল প্রতিপক্ষ। আর ইন্দিরার বৌমার দল জোটসঙ্গী।

এরই নাম রাজনীতি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sonia Nitish Lalu Swabhiman rally Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE