১০ দিনের মাথায় ফের সাক্ষাৎ প্রশান্ত এবং শরদের। —ফাইল চিত্র।
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক সেরেই ১৫টি বিরোধী দলকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পওয়ার। মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় সকলকে জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়েছে। পওয়ার এবং ভোটের আগে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিন্হার তরফে সেই মতো আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে গিয়েছে সকলের কাছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শরদ পওয়ারজি এবং যশবন্ত সিন্হাজি আলোচনা ডেকেছেন। সকলকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
প্রশান্তর সঙ্গে বৈঠকের পরই কেন বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকতে হচ্ছে, তা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে, বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় জোট গড়ে তোলা। এর আগে, বাংলায় ভোটপর্ব মিটতেই মুম্বই ছুটে গিয়েছিলেন প্রশান্ত। সেখানে প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গে একটানা তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তার পর ১০ দিনও কাটেনি। সোমবার ফের দিল্লিতে দু’জনের মধ্যে জরুরি আলোচনা হয়। অশীতিপর শরদ নিজে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আধ ঘম্টার বেশি কথা হয় তাঁদের মধ্যে। তার পরই বিরোধী দলগুলিকে বৈঠকে ডাকেন শরদ।
এর আগে, প্রশান্ত একে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে ১০ দিনের মাথায় ফের কী নিয়ে জরুরি আলোচনা হল, তা নিয়ে দু’পক্ষের কেউই এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তবে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে, শোনা যাচ্ছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কৌশল রচনাতেই এই বৈঠক। আার এমনটাও শোনা যাচ্ছে যে, বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে শামিল করতে রাজি নন দু’জনের কেউই। তার পরিবর্তে বিজেপি-কংগ্রেস, দুই দলকেই বাদ দিয়ে তৃতীয় জোট গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে তাঁদের মধ্যে।
মহারাষ্ট্রে এই মুহূর্তে শিবসেনা এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহা আঘাডি জোট’ সরকারে শামিল রয়েছে এনসিপি। তবে ইদানীং তাদের মধ্যে মতবিরোধের খবর আসতে শুরু করেছে। ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনও। তাতে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি, তিন দলের একাধিক প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই একা লড়ার জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এনসিপি-র হাত শক্ত করতেই প্রশান্ত পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করছেন কি না, সেই জল্পনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
যদিও রাজনীতিকদের একাংশের মতে, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল না করে এখন বিজেপি-কে পরাস্ত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলগুলির কাছে। সে ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করছেন সকলে। তাঁদের আশ্বাস জোগাচ্ছে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো রাজ্য, যেখানে প্রমাণ হয়েছে যে, বিজেপি-র অশ্বমেধ ঘোড়ার দৌড়ে লাগাম টানা সম্ভব। তাই বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে নামতে চলেছে। আর তাদের একসুতোয় বাঁধার কাজটি করছেন প্রশান্ত। তাই কখনও পওয়ার, কখনও বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তানি আওয়ামি মোর্চা (সেক্যুলার), উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় সাক্ষাৎ করছেন তিনি।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় জোট গড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদের মতে, যতই জাতীয় দল বলে নিজেদের জাহির করুক না কেন কংগ্রেস, একের পর এক রাজ্যে জমি হারাচ্ছে তারা। যেখানে সরকারে রয়েছে, সেখানেও অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার দল।বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে বর্তমানে তারাই সবচেয়ে দুর্বল। কৃষক আন্দোলন থেকে করোনা সঙ্কট, সেন্ট্রাল ভিস্তা থেকে লাগামহীন ভাবে কর্পোরেটদের বিপুল ঋণ মকুব, কোনও বিষয়েই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিবাদ এবং আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি কংগ্রেস। করোনা টিকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের সময়ও তাদের চেয়ে অন্য বিরোধী দলগুলি অনেক সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।
কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলে পরিবারতন্ত্র, ইউপিএ আমলের দুর্নীতি, রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে বিজেপি আক্রমণের সুযোগও পেয়ে যাবে, সেই কারণেও কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় জোট গড়ার পক্ষে অনেক দলই সওয়াল করছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে শিবসেনা ইতিমধ্যে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছে। বিষয়টি নিয়ে পওয়ারের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্থ কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। বাংলায় নির্বাচনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিল্লিকে পরবর্তী লক্ষ্য করার কথা বলেছিলেন।
শুধু তাই নয়, প্রশান্তর সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ালেও, প্রশান্তর দেখা না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে সম্প্রতি তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন প্রশান্ত। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কিছু প্রকাশ করতে পারবেন না তিনি। তাই তৃতীয় জোট গড়ার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বাংলায় ভোট মিটে যাওয়ার পর ভোটকুশলীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রশান্ত। একই সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে আদর্শগত সঙ্ঘাত নিয়েও বরাবর সরব তিনি। তাই বিরোধী দলগুলিকে একজোট করে, প্রশান্ত দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরকে টক্কর দেওয়ার প্রস্তুতিই নিচ্ছেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy