Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

জেডি (এস)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েও কাজ হল না, ইয়েদুরাপ্পা শপথ রুখতে তাই মরিয়া কংগ্রেস

মূল আর্জি দু’টি— শপথের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক এবং গরিষ্ঠতা প্রমাণের সময়সীমা কমানো হোক। 

মধ্যরাতে: সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেস নেতা অভিষেক সিঙ্ঘভি। পিটিআই

মধ্যরাতে: সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেস নেতা অভিষেক সিঙ্ঘভি। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০৩:৪৩
Share: Save:

জেডি (এস)-এর সঙ্গে হাত মিলে সরকার গঠনের সংখ্যা জোগাড় করে ফেললেও কর্নাটকের রাজ্যপাল বজুভাই বালা যে তাদের ডাকবেন না, সেটা ভালই বুঝতে পারছিল কংগ্রেস। তাই বুধবার সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার তোড়জোড় শুরু করে দেয় তারা। এ দিন বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজ্যপালের সই করা বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস এবং জেডি (এস) নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীর তরফে আবেদন পেশ করেন কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। মূল আর্জি দু’টি— শপথের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক এবং গরিষ্ঠতা প্রমাণের সময়সীমা কমানো হোক।

কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘বিজেপির আসন সংখ্যা ১০৪ থেকে ১১১-এ নিয়ে যেতেই তাদের ১৫ দিন সময় দিয়েছেন রাজ্যপাল।’’ আর রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কথায় রাজ্যপাল সংবিধানকে এনকাউন্টার করে হত্যা করলেন।’’

শীর্ষ আদালতে তাদের সওয়ালে গোয়া-মণিপুর-মেঘালয়ের উদাহরণ তুলে ধরতে চায় কংগ্রেস। ওই তিন রাজ্যেই একক বৃহত্তম দল ছিল কংগ্রেস। কিন্তু ভোটের পর আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে জোট তৈরি করে বিজেপি। রাজ্যপালরা সেই জোটকে সরকার গড়তে ডেকেছিলেন। গোয়ার ক্ষেত্রে আদালতে গিয়েছিল কংগ্রেস। রায় তাদের বিরুদ্ধে যায়। এখন সেই হারকেই হাতিয়ার করছে তারা।

কংগ্রেসের যুক্তি, কর্নাটকে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হলেও কংগ্রেস-জেডি (এস) জোটের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক রয়েছেন। ২০১৭-য় গোয়া-কাণ্ডের সময় অরুণ জেটলির টুইটকেও হাতিয়ার করছে কংগ্রেস। জেটলি বলেছিলেন, ‘ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়করা যদি জোট তৈরি করেন, তা হলে সেই জোটকে সরকার গড়তে ডেকে ও অল্প সময়ের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রমাণ করতে বলে রাজ্যপাল সঠিক সাংবিধানিক সিদ্ধান্তই নেবেন।’

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের অবশ্য পাল্টা দাবি, সুপ্রিম কোর্ট গোয়া-রায়ে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি। তারা শুধু বলেছে, তাঁর সিদ্ধান্ত যেন একতরফা না হয়। রবিশঙ্করের দাবি, রাজ্যপাল এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে, বিজেপি স্থায়ী সরকার গঠন করতে পারবে।

কর্নাটক প্রসঙ্গে শঙ্করদয়াল শর্মা বনাম কে আর নারায়ণন বিতর্কও ফিরে এসেছে। ১৯৯৬-এ তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা একক বৃহত্তম দলের নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সরকার গড়তে ডেকেছিলেন। কিন্তু সেই সরকার মাত্র ১৩ দিন টিকেছিল। ১৯৯৮-তে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন সে পথে হাঁটেননি। তিনিও বাজপেয়ীকেই সরকার গড়তে ডেকেছিলেন। কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন যে, এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবে।

কিন্তু বৃহত্তম জোটকে ডাকার বিপক্ষে মত দিয়েছেন একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ। সূত্রের খবর, আজ রাজ্যপালের দফতর থেকে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগির মতামত চাওয়া হয়। রোহতগি দিল্লিতে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল একক বৃহত্তম দলকে ডাকতে বাধ্য। যদি বিজেপি বলে, তারা সরকার গড়তে পারবে না, তা হলে তিনি দ্বিতীয় বৃহত্তম দলকে ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময় দেবেন।’’ প্রবীণ আইনজীবী সোলি সোরাবজিরও যুক্তি, গোয়া-মণিপুর-মেঘালয়ের দৃষ্টান্তের কোনও গুরুত্ব নেই। যে দলের হাতে সব থেকে বেশি আসন, তাদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ডাকা উচিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE