সত্যপাল সিংহ। ছবি: সংগৃহীত
বাঁদর বাঁদর। মানুষ মানুষ। কোনও যোগ নেই দুই প্রজাতির সঙ্গে। চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব নাকচ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিংহের বক্তব্য নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন মন্ত্রীমশাই দাবি করলেন, এতটুকু ভুল বলেননি তিনি। নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসবেন না কোনও ভাবেই।
আর বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করতে মন্ত্রী টেনে আনলেন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাকেও। সত্যপালের কথায়, ‘‘ভিত্তি ছাড়া কথা বলি না। আর আমিও তো বিজ্ঞানেরই মানুষ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পিএইচডি করেছি। পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গোটা বিশ্বে ডারউইনের তত্ত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে। এই তত্ত্ব মিথ ছাড়া আর কিছু নয়।’’ মন্ত্রীকে প্রচ্ছন্ন ভাবে সমর্থন দিয়ে চলেছে বিজেপিও। দলীয় ভাবে সত্যপালের থেকে দূরত্ব রেখে বক্তব্য রাখেননি কেউ। বরং মন্ত্রীর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সঙ্ঘ থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাম মাধব। কীসের ভিত্তিতে এমন তত্ত্ব, তা বোঝাতে টুইটারে একটি নিবন্ধের যোগও হাজির করেছেন তিনি।
রাম, হনুমান ও বাঁদরের কাহিনিতে ভরপুর বিজেপির রাজনীতিতে এই ধরনের বক্তব্যের রহস্য খুঁজছেন অনেকে। আর গোটা ঘটনায় বিজেপি প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে চললেও প্রতিবাদ জানাতে নেমেছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। গত কাল ঔরঙ্গাবাদে সর্বভারতীয় বৈদিক সম্মেলনে সত্যপাল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা কেউ বাঁদরকে মানুষে পরিণত হতে দেখেননি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা কোনও কাহিনিতেও এমন ঘটনার উল্লেখ নেই। ওই তত্ত্ব স্কুল-কলেজে পড়ানো উচিত নয়।’’ এর পরেই ‘ব্যথিত’ বিজ্ঞানীরা প্রতিবাদ জানিয়ে মন্ত্রীকে চিঠি লিখতে চলেছেন। বিজ্ঞানী ও এই ক্ষেত্রের ৩৮৮ জন চিঠিতে সই করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘ডারউইনের বিবর্তনের তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা খারিজ করেছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। বরং ডারউইনের ভাবনাকে সামনে রেখে পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন আবিষ্কার সামনে এসেছে।’’ এ ছাড়া, ‘বেদই সব প্রশ্নেরই উত্তর’ বলে মন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তারও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। লিখেছেন, ‘‘ভারতে গবেষণার ইতিহাসে এটা অপমান ছাড়া কিছু নয়।’’ বায়োকনের সিএমডি কিরণ মজুমদার শ-ও মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রটি অনেক বিস্তৃত। একজন কেমিস্ট কখনওই জিন বিশেষজ্ঞ নন। বিবর্তনের তত্ত্বের ব্যাপারটা মন্ত্রীকেও তাই বুঝতে হবে।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখা উত্তপ্ত, সাত দিনে পাঁচ বার ভারতীয় দূতকে তলব
মন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠির খসড়ায় ক্ষুব্ধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতরের কোনও মন্ত্রী যখন এই ধরনের কথা বলেন, তা.আধুনিক গবেষণা ও বিজ্ঞান ভাবনার প্রসারে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর চেষ্টায় আঘাত করে।
তবে গোটা ব্যাপারটায় মোদী মন্ত্রিসভার অন্য কোনও সদস্য কিংবা বিজেপি নেতারা যে আহত, তার ছিটেফোঁটা ইঙ্গিতও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy