আত্মরক্ষার নানা হাতিয়ার সাজানো ছিল। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পুলিশের জেরা-পর্বে সেগুলি একের পর এক তুলেও ধরছিলেন। তবু শেষরক্ষা হল না। পুণেতে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার অন্তরা দাসের খুনের চক্রান্ত যে তাঁরই, মেনে নিলেন সন্তোষ কুমার। বুধবার গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজকুমার শিণ্ডে বৃহস্পতিবার জানান, দফায় দফায় জেরার পরে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েন সন্তোষ। খুনের ছক যে তাঁরই, তা মেনে নেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণও মিলেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, সন্তোষ জানিয়েছেন যে তিনি নিজে খুন করেননি। এক ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ করেছিলেন। তার পরিচয়ও জানা গিয়েছে। সন্তোষের আর এক বন্ধুকেও আটক করে জেরা করছে পুলিশ। আদালত সন্তোষকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। কলকাতার সরশুনার মেয়ে অন্তরা পুণের ডেহু রোড এলাকায় খুন হওয়ার পরেই সন্তোষের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে তাঁর পরিবার। পুণের পুলিশ কর্তারা জানান, অন্তরার কললিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, গত কয়েক মাসে সন্তোষ একাধিক বার ফোন করেছেন। মেসেজ পাঠিয়ে প্রেমের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার চাপ দিয়েছেন। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সন্তোষের খোঁজে সেখানে যায় পুলিশের একটি দল। সোমবার গভীর রাতে তাঁকে পুণে আনা হয়। শুরু হয় জেরা। পুলিশ সূত্রের দাবি, গোড়ায় সন্তোষ এলোমেলো কথা বলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করছিলেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সিসিটিভি ফুটেজও আনেন। তাঁর দাবি ছিল, অন্তরার খুনের রাতে তিনি বেঙ্গালুরুতেই ছিলেন। মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখার আর্জিও তিনি জানান। কিন্তু সন্তোষের আচরণে তদন্তকারীদের মনে হচ্ছিল, অন্তরা যে খুন হবেন, তা যেন জানতেন তিনি।
সব তথ্যপ্রমাণ বড় বেশি সাজানো বলেই সন্দেহ গাঢ় হচ্ছিল। বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সন্ধ্যায় ডেহু রোড থানায় অন্তরার পরিবারের সামনে জেরায় বসানো হয়। চাপ বাড়তেই ভেঙে প়়ড়েন সন্তোষ।
মেধাবী ছাত্রী অন্তরা (২৩) পৈলানের একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেঙ্গালুরু যান। সেখানেই সন্তোষের সঙ্গে পরিচয়। প্রশিক্ষণের শেষে মাস ছয়েক আগে একটি বহুজাতিক সংস্থার পুণে অফিসে যোগ দেন অন্তরা। তত দিনে সন্তোষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে তাঁর। অন্তরার পরিবারের দাবি, সন্তোষ তা মানতে পারেননি। প্রায়ই ফোন, মেসেজ করে অন্তরাকে উত্ত্যক্ত করতেন তিনি। নম্বর ব্লক করলে অন্য নম্বর থেকে মেসেজ আসত। ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তালবাড়ের অফিসের কাছে এক আততায়ী অন্তরার গলা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ মারে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর।
সন্তোষ গ্রেফতারের পরে অন্তরার জেঠু পঞ্চানন দাস বলেন, ‘‘ সন্তোষের যেন কঠোরতম শাস্তি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy