Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঘুষ খেয়েছেন কেজরী, দাবি বরখাস্ত মন্ত্রীর

বাকি ছিলেন তিনিই! দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েই রাজনীতিতে যাঁর উত্থান, দুর্নীতির অভিযোগ এ বার তাঁরই বিরুদ্ধে! আপ শীর্ষনেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে দু’কোটি টাকা ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ আনলেন দলেরই নেতা তথা সদ্য প্রাক্তন দিল্লির জলসম্পদ মন্ত্রী কপিল মিশ্র।

অরবিন্দ কেজরীবাল

অরবিন্দ কেজরীবাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

বাকি ছিলেন তিনিই! দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েই রাজনীতিতে যাঁর উত্থান, দুর্নীতির অভিযোগ এ বার তাঁরই বিরুদ্ধে! আপ শীর্ষনেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে দু’কোটি টাকা ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ আনলেন দলেরই নেতা তথা সদ্য প্রাক্তন দিল্লির জলসম্পদ মন্ত্রী কপিল মিশ্র। আপ নেতৃত্ব এই অভিযোগ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিলেও, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই কেজরীবাল ও সত্যেন্দ্র যাদব এ নিয়ে মুখ খোলেননি।

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরেছেন কেজরীবাল। এ পর্যন্ত তাঁর মন্ত্রিসভার ৭ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও, বাদ ছিলেন কেজরীবাল। সরকারের দু’বছরের মাথায় সেই তালিকায় চলে এল তাঁর নামও। কপিল মিশ্রের অভিযোগ, দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে কেজরীবালের হাতে দু’কোটি টাকা তুলে দিতে দেখেন। এই নগদ টাকা কোথা থেকে পেলেন ও কেজরীবালই বা কেন তা নিচ্ছেন সে প্রশ্ন করেও সত্যেন্দ্র বা কেজরীবালের কাছে জবাব পাননি। কপিলের কথায়, ‘‘খোদ কেজরীবাল এ ভাবে ঘুষ খাওয়া মেনে নিতে পারায় আমি প্রকাশ্যে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি।’’

আন্দোলনের পর্বে কেজরীবালের গুরু অণ্ণা হজারে এতে পুরোপরি আশাভঙ্গের কথা বললেও গোটা বিষয়টির মধ্যে বিজেপির হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আপ নেতৃত্ব। কপিলের মা অন্নপূর্ণা মিশ্র বিজেপির পদাধিকারী। এক সময়ে দিল্লি পুরসভায় মেয়রও ছিলেন। তিনি চান ছেলে কপিল বিজেপিতে যোগ দিক। এরই মধ্যে দিল্লি পুর নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে গোটা দিল্লিতে জলের সমস্যা তীব্র হয়। কেজরী শিবিরের আশঙ্কা, পরিকল্পিত ভাবে জলসম্পদ মন্ত্রী কপিলকে দিয়ে কৃত্রিম ওই জলাভাব তৈরি করেছিল বিজেপি। যার প্রভাব পড়ে দিল্লির পুরভোটের ফলাফলে।

আপ সূত্র জানিয়েছে, জলসম্পদ মন্ত্রী হিসাবে কপিলের ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে গত কাল মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন কেজরীবাল। সেই ক্ষোভ থেকেই এই প্রত্যাঘাত বলে মনে করছেন কেজরীবালের ডান হাত মণীশ সিসৌদিয়া। যদিও পাল্টা অভিযোগে কপিল জানিয়েছেন, গত কাল তিনি কেজরীবালকে জানান যে দু’কোটি টাকার বিষয়টি তিনি দুর্নীতি দমন শাখাকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন। সেই রাগেই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও সিসৌদিয়া বলছেন, ‘‘দিল্লিতে জলের সমস্যা হওয়ায় কপিলকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কপিলের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতি দমন শাখার কাছে অভিযোগ জানিয়েছি বলেই আমাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

কেজরীবালের বন্ধুরা তো বটেই রাজনৈতিক শত্রুদেরও অনেকে বিশ্বাস করছেন না যে তিনি ঘুষ নিতে পারেন। বন্ধু কুমার বিশ্বাসের কথায়, ‘‘বারো বছর কেজরীবালকে চিনি। তিনি ঘুষ নিতে পারেন, এটা তাঁর শত্রুও বিশ্বাস করবে না।’’ যোগেন্দ্র যাদব বর্তমানে কেজরীবালের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনিও বলেছেন, ‘‘ক্ষমতালোভী বা স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন, কিন্তু কেজরীবাল ঘুষ নিয়েছেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’’ ব্যতিক্রম পদুচেরির উপরাজ্যপাল কিরণ বেদী। এক সময় বিজেপিতে যোগ দিয়ে কেজরীবালের সঙ্গে ভোটের টক্করে নেমেছিলেন তিনি। কিছুই করে উঠতে পারেননি। আজ তিনি টুইট করেছেন, ‘‘এক জন মন্ত্রী যখন বলছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতির প্রত্যক্ষদর্শী, তখন অবিলম্বে এর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।’’

বিজেপির দিল্লি শাখার সভাপতি মনোজ তিওয়ারি এ দিন উপ-রাজ্যপাল অনিল বৈজলের সঙ্গে দেখা করে দাবি করেন, ইডি, সিবিআই ও আয়কর দফতরকে দিয়ে এর তদন্ত করানো হোক। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘অবিলম্বে ইস্তফা দিতে হবে কেজরীবালকে।’’ একই দাবিতে কংগ্রেসের যুব মোর্চা আজ কেজরীবালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের সামাল দিতে পুলিশকে জলকামান ব্যবহার করতে হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE