ত্রিশূরে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণকর্মী। ছবি: এএফপি।
দু’দিন ধরে সামান্য কমেছে বৃষ্টি। অল্প অল্প করে নামছে জলস্তর। ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ এখন লড়াই, নতুন করে সব কিছু গড়ে তোলার। রবিবার উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানান, এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ, পুনর্বাসন। তার পরে সর্বত্র পানীয় জলের ব্যবস্থা করা। কেন্দ্রের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সোমবার ১ কোটি ৪০ লক্ষ লিটার জল নিয়ে বিশেষ ট্রেন পৌঁছবে কেরলে। আগামিকালই নৌসেনার একটি জাহাজে ৮ লক্ষ লিটার জল পৌঁছচ্ছে।
বিজয়নের বক্তব্য, যে উদ্যমে উদ্ধারকাজ চলেছে, পুনর্বাসনেও দেখাতে হবে সেই সক্রিয়তা। দু’দিন ধরে বৃষ্টির তোড় কমায় গতি পেয়েছে ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজ। এ দিনও উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ২২ হাজার মানুষকে। সব মিলিয়ে বন্যায় গৃহহীন প্রায় আট লক্ষ। আশা জাগিয়ে আবহাওয়া দফতর জানায়, আগামী চার দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তবে আশঙ্কামুক্ত নয় কোঝিকোড়, কান্নুর ও ইদুক্কি জেলা। সেখানে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বন্যায় মৃতের সংখ্যা রবিবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭০।
কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাহায্যের জন্য আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। ইতিমধ্যেই উপসাগরীয় দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবের পরে আজ কাতার দিয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং পলিটবুরো সদস্য এম এ বেবি এ দিন তিরুঅনন্তপুরমের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন। কেন্দ্রের ৫০০ কোটি টাকা যথেষ্ট নয়। অন্তত দু’হাজার কোটি টাকার সাহায্য অবিলম্বে দরকার।’’ কেরলের পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণার জন্য এ দিন ফের সরব হয়েছে সিপিএম। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী গত কালই কেরলের পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করার আর্জি জানিয়েছিলেন। আজ একই দাবি জানান শরদ যাদবও। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার পর্যন্ত সেই ঘোষণা করেননি। বিকেলে এক টুইটে তিনি জানান, কর্নাটকের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন: দেবতা চটে যাওয়াতেই কেরলে বন্যা! বিতর্কিত মন্তব্য আরবিআই কর্তার
কেরলের ত্রাণে রবিবার ১০ কোটি টাকা সাহায্য ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইট-বার্তায় বলেন, ‘‘কেরলের মানুষের পাশে আন্তরিক ভাবে আছি। ওঁরা ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিপর্যয় ও ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দিচ্ছি আমরা।’’ বিজয়ন ধন্যবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এই সাহায্যে।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কেরলের জন্য রাজ্যের বাম বিধায়কেরা এক মাসের বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেবেন। কংগ্রেসের সব সাংসদ-বিধায়ক এবং ডিএমকে-এডিএমকে বিধায়কেরা এক মাসের বেতন দেবেন।
কেরলে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য এর্নাকুলম থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কাছে আর্জি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, এর্নাকুলম থেকে সাঁতরাগাছি ও হাওড়া পর্যন্ত দু’টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে কেরলের সিপিএম নেতা কে কে রাগেশ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসমের বহু লোক আটকে। তাঁদের জন্য পৃথক ট্রেনের বন্দোবস্ত করা হোক।’’ রবিবার থেকেই তিরুঅনন্তপুরম এবং এর্নাকুলমের মধ্যে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। এক বিবৃতিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার সন্ধে থেকে কেরলের সর্বত্র রেল চলাচল শুরু করা যাবে।
চেঙ্গান্নুর, আলুভার মতো কিছু জায়গায় জলস্তর কমতেই শুরু নতুন সমস্যা। সর্বত্র থকথক করছে কাদামাটি। বাড়ছে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা। তার মধ্যে সাপের আতঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy