মুগলসরাই স্টেশন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
চা-এর কাপে তুমুল আড্ডা। মাছ-ভাত। খাওয়ার শেষ পাতে মিষ্টি দই। আর রবিবারের দুপুরে অবশ্যই মাংসের ঝোল। এ ধরনের কিছু জিনিসে যেন বাঙালিদের পেটেন্ট রয়েছে।
মাছ-মিষ্টি অ্যান্ড মোরের ঘেরাটোপে মোড়া বাঙালির নস্টালজিয়া শুধু খাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। রয়েছে ভ্রমণেও। ছুটি পেলেই দিঘা-পুরী-দার্জিলিং তো ধরাবাঁধা। পায়ের তলায় সরষে লাগানো বাঙালির কিন্তু উত্তর ভারতও বড্ড প্রিয়। আর সে ক্ষেত্রে বাঙালি ‘হা’ বললে যেমন ‘হাওড়া’ বোঝে, উত্তর ভারত বললেই বাঙালির চোখে ভেসে ওঠে একটা রেল স্টেশন— ‘মুগলসরাই’।
উত্তর প্রদেশের এই জংশন স্টেশনের নাম রবি ঠাকুর থেকে তারাশঙ্কর, সত্যজিত্, শরদিন্দু, শরৎচন্দ্র— কার লেখায় নেই! বাঙালির গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি সিনেমাতেও ‘মুগলসরাই’ বরাবরের ‘ফেভারিট’। সেই স্টেশনের নাম নাকি বদলে যাবে! উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তেমন দাবি জানিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব জানিয়েছেন। কিন্তু, কিছু জিনিসের বদল না হওয়াতেই বিশ্বাস করে বাঙালি মন। সে যেমন আজও ‘মাদার টেরিজা সরণি’ না বলে কলকাতার বিখ্যাত রাস্তাকে ‘পার্ক স্ট্রিট’ নামেই ডাকতে ভালবাসে! তেমনই ‘মুগলসরাই’।
আরও পড়ুন, ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভে লাঠি মোদীর রাজ্যেই
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই এই জায়গার গুরুত্ব বুঝে স্টেশন তৈরির কথা ভাবে। রেললাইন পেতে মোগলসরাইয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় দিল্লি ও হাওড়াকে। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ‘মার্শেলিং ইয়ার্ড’ এবং ভারতীয় রেলের সবচেয়ে বড় ওয়াগন তৈরির ওয়ার্কশপও এই মুগলসরাইতেই। টিকিট বুকিং-এর দিক থেকেও দেশের প্রথম একশোটি স্টেশনের মধ্যে বরাবরই প্রথম দিকে এই স্টেশনের নাম।
শোনা যায়, মুঘল আমলে ক্যারাভ্যান নিয়ে পূর্ব ভারত থেকে উত্তর ভারতে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ী এবং যাত্রীরা জিটি রোডের উপর বর্তমান উত্তরপ্রদেশের এই জায়গায় রাত কাটাতেন। কারণ এখানে অনেক সরাইখানা ছিল। সেই থেকেই নাকি জায়গার নাম নাকি মুগলসরাই!
হঠাত্ করে সেই স্টেশনের নাম পরিবর্তনে উদ্যোগী হল কেন যোগী সরকার?
বিজেপি-র বক্তব্য, এই স্টেশনেই ট্রেনের মধ্যে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের। দলের বর্ষীয়ান নেতাকে স্মরণ করে তাঁকে ‘যোগ্য’ সম্মান দিতেই নাকি নাম পরিবর্তনের ভাবনা। ইতিমধ্যেই আদিত্যনাথের সরকার কেন্দ্রকে নামবদলের প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। কংগ্রেস অবশ্য এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের পাল্টা দাবি, নাম যদি বদলাতেই হয় তবে তা রাখতে হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নামে। কারণ, এটি তাঁর জন্মস্থান।
শেষ পর্যন্ত মুগলসরাইয়ের নাম আদৌ কি পাল্টাবে? কী নাম হবে তার? অপেক্ষায় রয়েছে বাঙালিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy