মুখোমুখি: আর্থিক সংস্কারের ২৫ বছরে ভারতের রূপান্তর নিয়ে অর্থনীতিবিদ রাকেশ মোহন সম্পাদিত একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মনমোহন সিংহ এবং অরুণ জেটলি। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। সরকারের ভাবগতিক দেখে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে, ২০১৯-এর দিকে তাকিয়ে মোদী এ বার শুধুই জনমোহিনী রাজনীতির পথে হাঁটবেন। সংস্কার কি তা হলে শিকেয় উঠবে?
আজ যেন সেই সংশয় দূর করতেই মোদীর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যুক্তি দিলেন, আর্থিক সংস্কারের কোনও ‘ফিনিশিং লাইন’ নেই। কারণ ভারতের এখনও অনেক পথ চলা বাকি। যাতে দারিদ্র দূর করা যায়। পরিকাঠামোর ঘাটতি মেটানো যায়।
কিন্তু মোদী সরকার যে অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির ‘চতুর মেলবন্ধন’ ঘটাতে চায়, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন জেটলি। তাঁর যুক্তি, ভোটে জেতার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে প্রয়োজন রাজনীতির উপযুক্ত মেলবন্ধনের। সংস্কারের পক্ষেই সওয়াল করে আজ জেটলি বোঝাতে চেয়েছেন, গ্রাম-গরিবের জন্য অর্থ ব্যয়ও সংস্কারেরই অঙ্গ। সেটা শুধুই জনমোহিনী রাজনীতি নয়।
আর্থিক সংস্কারের ২৫ বছরে ভারতের রূপান্তর সম্পর্কে আজ দিল্লিতে একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজধানীর প্রথম সারির অর্থনীতিবিদেরা। সেখানে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা ১৯৯১-এর সংস্কারের জনক মনমোহন সিংহও। যাঁর নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষর পদ ছাড়ার পরে মোদী সরকারের সংস্কারের কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সেই অরবিন্দ পানাগাড়িয়াও হাজির ছিলেন অনুষ্ঠানে। জেটলি বলেন, ‘‘এখনও অনেক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে। পরিকাঠামোয় এখনও যথেষ্ট ঘাটতি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ ভারত, সেচে এখনও অনেক অর্থ ব্যয় করা জরুরি। রাজ্যগুলির দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে আরও অর্থ প্রয়োজন। আর্থিক বৃদ্ধি উঁচু হারে বেঁধে রাখলেই এই অর্থের সংস্থান করা সম্ভব।’’
আরও পড়ুন:‘বেণীসংহার’ ঠেকাতে খোঁজ ব্যোমকেশের
মনমোহন সিংহ অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও কোনও কথা বলেননি। তাঁর দশ বছরের ইউপিএ-জমানার শেষবেলায় অভিযোগ উঠেছিল, মনমোহন চাইলেও ইচ্ছে মতো আর্থিক সংস্কার করতে পারছেন না। তার বদলে সনিয়া গাঁধীর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের কথায় খয়রাতির রাজনীতি করতে হচ্ছে। আজ মনমোহনের সামনে জেটলি সেই দিকেই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘আর্থিক সংস্কার করতে গিয়ে কেউ ভোটে হারে না। বরং কিছু না করে বসা থাকার জন্য ভোটে হারে।’’ আর্থিক সংস্কারের কৃতিত্ব শুধু মনমোহনকে না দিয়ে নরসিংহ রাওকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন জেটলি। বলেছেন, ‘‘ওই সংস্কার দেশের অর্থনীতির গতিপথের সঙ্গে মানসিকতাও পাল্টে দিয়েছিল। সন্দেহ নেই যে, ভারত এখন বসবাস করার পক্ষে অনেক উন্নত জায়গা।’’
আর্থিক সংস্কারের সঙ্গে রাজনীতি মেশাতে গিয়ে মোদী সরকারও গোলকধাঁধায় পড়বে কি না, তা নিয়ে অবশ্য অর্থনীতিবিদরা এখনও নিশ্চিত নন। জেটলি অবশ্য সংস্কার থমকে থাকার জন্য সংসদে রাজনৈতিক বিরোধিতার দিকেও আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, সংস্কারে বাধা দিতে চাইলেও বিরোধীদের জনমতের চাপের কাছে হার মানতে হচ্ছে।
যদিও জেটলির এই দাবি উড়িয়ে বিরোধীরা বলছেন, মোদী সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মতোই সংস্কারের আশ্বাসও একটা ‘ধাপ্পাবাজি’। তাঁদের অভিযোগ, এই জমানায় সংস্কার মানে গরিবের প্রাপ্য ছাঁটাই করে বড় শিল্পপতিদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। ব্যাঙ্কে আমানতের সুদের হার কমিয়ে, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে, আমজনতার প্রাপ্য ভর্তুকিতে কোপ মেরে এই সরকার ধনী শিল্পপতিদের ঋণ মকুব করে তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy