Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মৃত দিনমজুরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া তুলল ৫০ লাখ!

কষ্টেসৃষ্টে হয়তো পাঁচ হাজার টাকা গুনতে পারবেন। পঞ্চাশ হাজার? সে তো অনেক টাকা বলে শুনেছেন। জীবনে চোখেই দেখেননি। আর পঞ্চাশ লক্ষ! পাঁচের পিছনে ক’টা শূন্য যে হতে পারে, ভেবে কূল-কিনারাই পাচ্ছেন না রানি। 

মেয়ে কোলে রানি। নিজস্ব চিত্র

মেয়ে কোলে রানি। নিজস্ব চিত্র

অনমিত্র সেনগুপ্ত
দ্বারকা (দিল্লি) শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

কষ্টেসৃষ্টে হয়তো পাঁচ হাজার টাকা গুনতে পারবেন। পঞ্চাশ হাজার? সে তো অনেক টাকা বলে শুনেছেন। জীবনে চোখেই দেখেননি। আর পঞ্চাশ লক্ষ! পাঁচের পিছনে ক’টা শূন্য যে হতে পারে, ভেবে কূল-কিনারাই পাচ্ছেন না রানি।

সাত দিন আগে যাঁর অ্যাকাউন্টে পাঁচশো টাকাও ছিল না, দিল্লির দ্বারকা এলাকার সেই রানি এখন পঞ্চাশ লক্ষ টাকার মালিক। দিনমজুর অনিল নিজের জীবন দিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে দিয়ে গিয়েছেন রানি ও তাঁর ছেলে-মেয়েদের। সেই টাকা কী ভাবে হাতে পাবেন, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা না থাকলেও যে ভাবে সরকার থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে ভরসা পেয়েছেন রানি। আর্থিক স্বাধীনতার কারণে ঘিঞ্জি এক কামরার বাড়ি ছেড়ে একটি নিজস্ব বাড়ি, ছেলের জন্য ভাল স্কুল, মানসিক ভাবে অসুস্থ মেয়ের জন্য সুচিকিৎসার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

অথচ, কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ছবিটা একদম উল্টো ছিল। গত এক মাস ধরে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি। আর সে জন্যই বাড়তি রোজগারের আশায় দিনমজুরি করা অনিল গত শুক্রবার দ্বারকার দাবরি মোড় এক্সটেনশন এলাকায় নালা পরিষ্কার করতে নেমে পড়েছিলেন। প্রতিবেশী রাহুলের কথায়, ‘‘সম্ভবত ছোট নালা সাফ করতে করতে হাইড্রেনে চলে গিয়েছিল অনিল। তখনই ওর কোমরে বাঁধা দড়ি খুলে যায়। একেবারে ৪০ ফুট নিচে পড়ে সে। একে উপর থেকে পড়া, তার সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অনিল।’’

কিন্তু দিল্লিতে এ খুব ‘সাধারণ’ ঘটনা। আর পাঁচটা পরিবারের মতো ভেসে যেতে পারত রানি-অনিলের পরিবারও। কিন্তু ভাসল না। তার একমাত্র কারণ— সোশ্যাল মিডিয়া।

আরও পড়ুন: নেশায় বাধা, খুন হোমের পরিচালককে

সোমবার অনিলের দেহ সৎকারের জন্য হাতে পান রানিরা। হাতে একটি পয়সা নেই। শ্মশানে বাবার দেহের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল রানির প্রথম পক্ষের ছেলে গৌরব। তিন বছরের সম্পর্কে অনিলকেই নিজের বাবা বলেই মানত গৌরব। সেই ছবি জায়গা করে নেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ছবিকে সামনে রেখে জনতার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার পরেই অভাবনীয় কাণ্ড। ১০... ২০... গৌরবদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়ে এখন সেখানে জমেছে ৫০ লক্ষ টাকা। কেজরীবাল সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসাবে রানিকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। বিহ্বল রানি আভাস পাচ্ছেন দিনবদলের। বলছিলেন, ‘‘ছেলেটাকে পড়াতে পারব। রেশমার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।’’

আরও পড়ুন: বিহারের হোম-কাণ্ডে উদ্বেগ সুপ্রিম কোর্টের

স্বস্তির মধ্যেও রানির আফসোস ‘বাবু’ আর ফিরবে না। অনিলকে বাবু বলেই ডাকতেন তিনি। তিন বছর ধরে ঘর করেছিলেন অনিলের সঙ্গে। ভেবেছিলেন, সম্পর্কটাকে সামাজিক তকমা দিতে বিয়েটা সেরে ফেলবেন। কিন্তু দু’সপ্তাহের মধ্যে পাল্টে গেল ছবিটা। প্রথমে নিউমোনিয়ায় মারা গেল তাঁদের দেড় বছরের মেয়ে। সাত দিনের মধ্যে মারা গেলেন অনিল।

এখন আবার পাল্টাচ্ছে জীবনচিত্র। হাতে টাকা এসেছে। তবে জীবনের বিনিময়ে। তাঁর বাবুর মৃত্যু যে কত দামি, চোখের জলে ভেসে তা এখন বুঝতে পারছেন রানি।

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Donations Social Media Campaigns
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE