Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ট্রেন হারিয়ে আশঙ্কায় মাহুর, হারাঙ্গাজাও

মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত মিটারগেজ রেল লাইনকে ‘হেরিটেজ’ প্রকল্প ঘোষণার দাবি খারিজ করল রেল বোর্ড। তার জেরে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ওই লাইনের আশপাশের বাসিন্দাদের বক্তব্য, রেলের এই সিদ্ধান্তের জেরে তাঁদের ১০-১২ কিলোমিটার হেঁটে কোনও সড়ক বা রেল স্টেশনে পৌঁছতে হবে।

বিপ্লব দেব
হাফলং শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত মিটারগেজ রেল লাইনকে ‘হেরিটেজ’ প্রকল্প ঘোষণার দাবি খারিজ করল রেল বোর্ড। তার জেরে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ওই লাইনের আশপাশের বাসিন্দাদের বক্তব্য, রেলের এই সিদ্ধান্তের জেরে তাঁদের ১০-১২ কিলোমিটার হেঁটে কোনও সড়ক বা রেল স্টেশনে পৌঁছতে হবে।

দেরিতে হলেও লামডিং-শিলচর লাইন ব্রডগেজ হওয়ায় দক্ষিণ অসমের মানুষ খুশি হয়েছিলেন। ইঞ্জিন, স্পেশাল ট্রেন, মালগাড়ির যাতায়াত দেখতে ভিড় জমত। এখনও সেই উৎসাহ তুঙ্গে। কিন্তু সেই আনন্দে নিজেদের সামিল করতে পারছেন না ডিমা হাসাও জেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ। অন্য জায়গায় যখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে, তখনই হাজার পঞ্চাশেক মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।

শতাধিক বছর ধরে ওই সব গ্রামের উপর দিয়েই চলত লামডিং-শিলচর মিটারগেজ ট্রেন। রাজ্য বা দেশের অন্য কোনও জায়গায় পৌঁছনোর প্রাথমিক পথটুকু ছিল মিটারগেজ লাইনটিই। ঘরের দাওয়ার কাছ দিয়েই ছোট্ট ট্রেন যাতায়াত করত। তাতেই খুশি ছিলেন স্থানীয় মানুষ। সড়কপথের প্রয়োজন তেমন ছিল না বলে দাবিও ওঠেনি।

ব্রডগেজ নির্মাণের সময় ছবিটা বদলে যায়। নতুন রুট থেকে বাদ পড়ে যায় প্রত্যন্ত ওই গ্রামগুলি। মাহুর থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত নতুন জায়গা বেছে নেয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। গত বছর ১ অক্টোবর থেকে ব্রডগেজের লাইন বসানোর কাজের জন্য রেল চলাচল বন্ধ হতেই সঙ্কট দেখা দেয় সেখানকার জনজীবনে।

দাবি উঠেছিল, দু’টি স্টেশনের মধ্যবর্তী মিটারগেজ লাইনে যখন হাত পড়েনি, সেটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। শতাধিক বছর আগে পাহাড় কেটে ব্রিটিশরা ওই রেল লাইন তৈরি করেছিল। ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে সেই অংশে মিটারগেজ ট্রেন চালানো হোক। পর্যটকরাও সে ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হবেন বলে যুক্তি সাজিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসে ডিমা হাসাও ছাত্র সংস্থা, জাদিখে নাইসো হাসাম, পাবলিক সার্ভিস ফোরাম-সহ কয়েকটি সংগঠন। প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে স্মারকপত্রও দেওয়া হয়।

উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পর্ষদও ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী সদস্য দেবজিত থাওসেন এই দাবি নিয়ে কয়েক মাস ধরে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন। তিনি দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গে। বিষয়টি রেলবোর্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তিনি রিজিজুর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব দিক বিবেচনার পর হেরিটেজ লাইনের দাবি বোর্ড খারিজ করে দিয়েছে। লামডিং-শিলচর মিটারগেজ লাইনে ট্রেন চলাকালীন দু’টি স্টেশনের টিকিট বিক্রির হিসেব টেনে তারা জানান, তাতে রেলের প্রতি দিন মোটা অঙ্কের লোকসান হবে।

রেলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। জাদিখো নাইসো হাসামের সভাপতি কল্যাণ দাওলাগুপো বলেন, ‘‘ডিমা হাসাও জেলায় ব্রডগেজ হয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজও চলছে। কিন্তু শতাধিক পাহাড়ি গ্রাম সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাঁদের কথা ভেবেই এই ঘোষণা করা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE