Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

বরাকের সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলার ভার নিলেন রাহুল

রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বরাকের সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে নেবেন। ব্যক্তিগত ভাবে তদারক করবেন কাজের অগ্রগতি। ভোটের প্রচার-সভায় এই আশ্বাস দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। এরই পাশাপাশি, কার্বি আংলঙের দিফুতে জেলার উন্নতির জন্য রাহুল হাজার কোটির প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।

জনতার কাছে...। নির্বাচনী জনসভায় রাহুল গাঁধী। অসমের ডিকুতে। মঙ্গলবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

জনতার কাছে...। নির্বাচনী জনসভায় রাহুল গাঁধী। অসমের ডিকুতে। মঙ্গলবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০৫:৪৬
Share: Save:

রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বরাকের সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে নেবেন। ব্যক্তিগত ভাবে তদারক করবেন কাজের অগ্রগতি। ভোটের প্রচার-সভায় এই আশ্বাস দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। এরই পাশাপাশি, কার্বি আংলঙের দিফুতে জেলার উন্নতির জন্য রাহুল হাজার কোটির প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। জানালেন, কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এই পিছিয়ে থাকা পার্বত্য জেলায় একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং একটি নার্সিং কলেজ গড়া হবে।

মন্দ আবহাওয়ার কারণে প্রায় দু'ঘণ্টা দেরিতে ডিফুর কাসা স্টেডিয়ামে হাজির হন রাহুল। কাছাড়ের কচুদরম আর করিমগঞ্জের নিলামবাজারেও তাঁর সভা শুরু হয় ঘণ্টা দুয়েক বিলম্বে। বরাকের দু’টি সভায় দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বাংলায় ‘‘আপনাদের সবাইকে জানাই নমস্কার’’ বলে ভাষণ শুরু করেন রাহুল গাঁধী।

আগের বার রাহুল গাঁধীকে সঙ্গে নিয়ে বরাকের সভায় মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ দু’হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে কচুদরমের সভায় রাহুল বলেন, ‘‘আমি আমেথির সাংসদ। কিন্তু আমার দরজাও আপনাদের জন্য সব সময় খোলা থাকবে। এখানকার সমস্যা নিয়ে রাজ্যে ঠিক মতো সাড়া না পেলে, আপনারা সোজা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘দিল্লি গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে, অভিযোগ জানাতে চাইলে, আমি দু’মিনিটের মধ্যে এসে তা শুনব। বরাকের সমস্যার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। সমস্যা সমাধানে আমিই ব্যবস্থা নেব।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাকে প্রচারে এসে এখানকার রাস্তাঘাট নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। আজ নিলামবাজারের সভায় বরাকের রাস্তাঘাটের সমস্যা নিজেই খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার রাস্তার দুর্দশা সম্পর্কে আমি জানি। আমি নিজেই এবার ব্যবস্থা নেব।’’ অসমের তিনটি সভাতেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাহুল। তাঁর কথায়, সংসদে তাঁরই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছাড়লেন বিজয় মাল্য, তাঁরই মন্ত্রীর বদান্যতায় ললিত মোদীর মতো দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিপতিও বিদেশে পালিয়েছেন। এরপরেই রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে দুর্নীতি নিয়ে এত কথা বললেন। এগুলি নিয়ে কোনও কথা বললেন না কেন?’’ রাহুলের অভিযোগ, কংগ্রেস আমলে বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্য হিসেবে অসম হাজার হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এসেই সেই বিশেষ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস জমানায় হরিয়ানায় কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই রাজ্যে জাট ও অ-জাটদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়ে গেল। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে ভোট সামনে এলেই মানুষকে মানুষের সঙ্গে লড়িয়ে দিয়ে ফয়দা লুঠতে চায় বিজেপি। যেমন গুজরাত, বিহার, উত্তরপ্রদেশে তারা চেষ্টা করেছিল। একই চেষ্টা অসমেও চালাচ্ছে। তাই মানুষকে সতর্ক
থাকতে হবে।’’

মোদীকে রাহুল ‘দাঙ্গাবাজ’ বলায় কাছাড়ের সভায় ‘মোদী মুর্দাবাদ’ ধ্বনি ওঠে। রাহুল ওই স্লোগান বন্ধ করতে বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীদের মুর্দাবাদ বলা কংগ্রেসের সংস্কৃতি নয়।’’ রাহুলের দাবি, আরএসএস গোটা দেশে একটাই মত চাপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু অসমের মতো বিভিন্ন ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির রাজ্যে তা বিপজ্জনক। অসমের মতো বৈচিত্রপূর্ণ রাজ্য শাসন করা খুব কঠিন। তার জন্য দরকার অভিজ্ঞতা আর মানুষের প্রতি ভালবাসা।’’ তাঁর মতে, ওই দু’টোই বিজেপির নেই। বিজেপি ভোটে জিতলে নাগপুর আর দিল্লি থেকে রিমোটে রাজ্য চালানো হবে বলে তিনি মানুষকে সতর্ক করেন।

মোদীর প্রাক্-লোকসভা প্রচারের প্রসঙ্গ টেনে এনে রাহুল বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে কালো টাকা ফেরানো, মূল্যবৃদ্ধি কমানো, বিশেষ রাজ্যের সুবিধে দেওয়া, জনগণের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করা, ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া, ফসলের ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য বাড়ানোর যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন তার একটাও রাখতে পারেননি। এ নিয়ে আর মুখও খুলছেন না। আপনারা তাঁকে প্রশ্ন করুন।’’ তাঁর কথায়, বিহারের মানুষ কথা না রাখায় মোদীকে পরাস্ত করেছেন। অসমবাসীও তাই করবেন। মোদীকে পুঁজিপতিদের নেতা বলে মন্তব্য করে রাহুল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘১৫ লক্ষের স্যুট পরে, বড়লোকদের সঙ্গে সেলফি তোলা মোদী কখনও কৃষক বা গরিবের সঙ্গে কেন সেলফি তোলেন না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE