অজ্ঞাতবাস থেকে তিনি ফিরেছেন নাকি ফেরেননি, ফিরলে কবে ঘটবে সেই প্রত্যাবর্তন— জানা নেই দলের উঁচু তলার বারো আনা নেতার। তবু তাঁদের নাওয়াখাওয়ার সময় নেই রাহুল গাঁধীর পুনরাবির্ভাবকে যথাসম্ভব মঞ্চসফল করে তোলার জন্য।
দিল্লিতে সভাটভা হলে নিচু তলার নেতাকর্মীদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতেন যে সব তথাকথিত ওজনদার নেতা, তাঁরাও ময়দানে নেমে পড়েছেন এ বার। এ ছাড়া উপায়ই বা কী? রাহুলের আত্মপ্রকাশের মঞ্চ বাঁধতে ঠেলে তাঁদের মাঠে নামিয়েছেন খোদ সনিয়া গাঁধী। নিজে খোঁজ নিচ্ছেন দফায় দফায়। প্রস্তুতির খতিয়ান চাইছেন প্রতি মুহূর্তে। কংগ্রেসের কোনও জনসভার আয়োজন নিয়ে কংগ্রেস পরিবারে এই তৎপরতা একেবারেই অভূতপূর্ব।
মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতায় ১৯ এপ্রিল দিল্লির রামলীলা ময়দানে কৃষকসভার ডাক দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। ওই সভায় রাহুল গাঁধী হাজির হবেন, শুরু করবেন রাজনীতির নয়া পর্ব— এমনটাই বলা হচ্ছে দলের তরফে। কিন্তু সেই সভাতেই যদি লোক না হয়! কংগ্রেস সূত্র বলছে, কৃষকসভার দিন নির্বাচন থেকেই লোক জোগাড় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে দলে।
জমি নীতির বিরোধিতায় সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে হলে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগের দিনটিই উপযুক্ত সময়। কিন্তু সমস্যা হল, এখন ফসল কাটার সময়। চাষিরা ফসল কাটবেন, না কংগ্রেসের সভায় এসে ভিড় জমাবেন। এই উদ্বেগ থেকেই কৃষকসভার আয়োজনের জন্য ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহকে মূল দায়িত্ব দিয়েছেন সনিয়া।
দলীয় সূত্রে খবর, কংগ্রেস সভানেত্রীর নির্দেশে দিগ্বিজয় নিজে পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও হিমাচলে গিয়েছেন। সেখানকার প্রদেশ স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগে হরিয়ানা ও রাজস্থানে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। তাই দিল্লিতে সভা হলে লোক আনায় ততটা সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন গোটা উত্তর ভারতে শুধু উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। ফলে দুই মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ ও হরিশ রাওয়াতকে যত বেশি সম্ভব লোক পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলের এক শীর্ষ সারির এক নেতা জানালেন, এমনিতেই কংগ্রেসের কোষাগারে এখন টানাটানি চলছে। তবু সবর্ভারতীয় কংগ্রেসের তরফে প্রদেশ কংগ্রেসগুলিকে সভায় লোক আনার জন্য যথাসম্ভব আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। এমনকী, দিল্লি ও তার লাগোয়া সব রাজ্যে কৃষকসভা নিয়ে পোস্টার-ব্যানার লাগানোর খরচ জোগাচ্ছে এআইসিসি-ই। ওই পোস্টারের নমুনাও আজ প্রকাশ করা হয়েছে। যে পোস্টারের মূল স্লোগান হল, ‘‘কিষাণ মজদুর কি আওয়াজ, না দবি হ্যায়, না দবেগী।’’ এমনকী, জমি বাঁচাতে কৃষকদের এসপার-ওসপার লড়াইয়ের ডাক দিয়ে রেডিও ‘জিঙ্গল’ও তৈরি করেছে কংগ্রেস। হিন্দি, হরিয়ানভি ও ব্রজ ভাষায় সে সব এফএম রেডিওয় বাজতে শুরু করবে পরশু থেকে।
শুধু পোস্টার নয়, ১৯ এপ্রিল রামলীলার মঞ্চের ‘ব্যাকড্রপ’ও আজ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। যেখানে ছবি রয়েছে শুধু রাহুল-সনিয়ার। গত এক দশকে এমনটা দেখা যায়নি। এত দিন মা-ছেলের সঙ্গে মনমোহন সিংহেরও ছবি থাকত। কিন্তু এখন দল ক্ষমতায় নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের রাজনৈতিক গুরুত্বও নেই সে রকম। তাই দলকে তলানি থেকে তুলে আনার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভরসা এই একটি পরিবারই।
রাহুলের আত্মপ্রকাশের সভা এটা ঠিকই, কিন্তু সনিয়াও যে আগামী দিনে আরও সক্রিয় থাকবেন, রামলীলা হয়তো সেই বার্তাই দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy