উত্তরপ্রদেশের বড় পরীক্ষার আগে পঞ্জাবের প্রথম রাউন্ডে নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দিতে পুরোদস্তুর আসরে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী। আর নেমেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে লড়াইয়ের ময়দান জমিয়ে দিলেন।
হারের আশঙ্কায় যে রাজ্যে মোদী কোনও রকমে দু’টি সভা করতে রাজি হয়েছেন, সেই পঞ্জাবে আজ থেকে তিন দিন ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকবেন রাহুল। আর আজই ছিল সে রাজ্যে মোদী-রাহুলের সভা। প্রথম দিনেই দলে সদ্য যোগ দেওয়া নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর সঙ্গে মাজিথায় সভা করতে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী রাহুল দলের সব আড়ষ্টতা ঝেড়ে ভোটের ঠিক এক সপ্তাহ আগে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দিলেন। সেই সঙ্গেই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের নাম করে মোদীর উদ্দেশে ছুড়ে দিলেন মোক্ষম প্রশ্ন। রাহুলের বক্তব্য, মোদী দুর্নীতি মোকাবিলার কথা বলেন। তা হলে বাদলের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কী করে ভোট চাইতে পারেন?
পঞ্জাবে বাদলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই ক্ষোভ জমছে। ভোটের বাক্সে তার জোর ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কায় বিজেপি-অকালি জোট শিবিরের নেতারাও। বিষয়টি আঁচ করে মোদী নিজেও পঞ্জাবে প্রচার এড়িয়ে চলছেন। জোট নেতাদের অনেক জোরাজুরিতে আজ জালন্ধরে সভা করলেও মঞ্চে বাদলের থেকে একটু তফাত রেখেই বসেন তিনি। সেই সভায় রাহুলের আক্রমণের সরাসরি জবাব এড়ালেও কংগ্রেসকে নিশানা করতে ছাড়লেন না। আসলে মোদীর মূল লক্ষ্য উত্তরপ্রদেশের ভোট। তাই পঞ্জাবে ভোট প্রচার করতে গিয়ে তিনি উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘‘কংগ্রেস একটি ডুবন্ত নৌকা। কখনও পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করে বাঁচতে চায়। আবার এত দিন উত্তরপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে রথে চেপে সমাজবাদী পার্টিকে গাল পেড়ে এখন বাঁচতে সমাজবাদীরই দোসর হয়েছে! দল, আদর্শ বলে কিছুই নেই।’’
পঞ্জাবে দাঁড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টানায় জোট নেতাদের অনেকেই অবাক। তাঁদের চিন্তা বাড়িয়েছে এত কথা বললেও মোদী এ দিন সুকৌশলে পঞ্জাবে নেশা, বেকারির মতো বিষয়গুলি এড়িয়ে গিয়েছেন। যদিও দুর্নীতির মতো ‘পছন্দের’ বিষয়টি এড়িয়ে যায়নি। বরং তাকে ‘কাজে লাগাতে’ সক্রিয় হয়ে বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি বলে তিন মাস আমার উপর কী জুলুমই না হয়েছে! কিন্তু আমি মোদী। জুলুমের সামনে মাথা ঝোঁকাই না।’’ যা শুনে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, ‘‘উনি প্রধানমন্ত্রী। ওঁর উপরে কে জুলুম করতে পারে? আসলে পঞ্জাবে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই। হারের ভয়েই উনি প্রলাপ বকছেন!’’
ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপির অনেক নেতাও মানছেন, পঞ্জাবে এ বারে জেতার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। এমনকী ত্রিমুখী লড়াইয়ে অরবিন্দ কেজরীবালের দলও পিছিয়ে পড়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কাল কেজরীবালকে লেখা তাঁর দলের এক নেতার চিঠি ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় হারের আশঙ্কা থাকায় এখন কেজরীবালকে বেশি সভা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আজ কেজরীকেও এক হাত নিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পঞ্জাবেও রাজ করতে চান রিমোট কন্ট্রোলে।’’
তবে সকলেই বলছেন, শেষ বাজারে অমরেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে রাহুল মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এত দিন কংগ্রেসের ঘরোয়া কোন্দলের জেরে মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা যায়নি। কিন্তু এখন রাহুল তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব যে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তার প্রমাণ অমরেন্দ্রর নাম ঘোষণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy