সংসদে পৌঁছলেন রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি সম্পর্কে কী গোপন তথ্য তাঁর কাছে রয়েছে, তা ফাঁস করেননি। গত কাল শুধু ফোঁস করে বলেছেন, সব খবর তাঁর কাছে আছে। আর রাহুল গাঁধীর এই এক হুমকিতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিজেপি শিবিরে। সেই আতঙ্ক এতটাই যে, আজ দিনভর গবেষণা চলল শাসক শিবিরে। পাশাপাশি রাহুলের আক্রমণ ভোঁতা করতে কপ্টার কেলেঙ্কারিতে সরাসরি গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলল বিজেপি। যদিও সেই কৌশল কতটা কাজ দিয়েছে তা নিয়েও সংশয়ে দলীয় নেতৃত্ব।
মোদী শিবিরের এই উদ্বেগের ছবিটাই আজ আরও উৎসাহ দিয়েছে রাহুলকে। সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে তাই কাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন তিনি। সম্ভবত সকাল সাড়ে দশটায় মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন রাহুল। নোট বাতিলের ধাক্কায় আক্রান্ত কৃষকদের থেকে দাবিপত্র সংগ্রহ করেছেন কংগ্রেস সহ সভাপতি। সূত্রের খবর, কাল সেটাই মোদীর টেবিলে ফেলে সুরাহার দাবি জানাবেন তিনি। কৃষি ঋণের সুদ কমানো, ঋণ মকুব, কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবেন। তাতে ইতিবাচক সাড়া না মিললে সেটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করবেন। কালই দুপুরে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে যাবেন রাহুল।
বিরোধী শিবির যত তৎপর হচ্ছে, বিজেপি ততই বুঝতে পারছে, নোট বাতিলের মাধ্যমে কালো কারবারিদের জব্দ করে গরিব ও মধ্যবিত্তকে খুশি করার যে পথ নিয়েছিলেন মোদী, তা ক্রমশই ভেস্তে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কালো টাকা কত উদ্ধার হল তা নিয়ে সরকার যেমন সদুত্তর দিতে পারছে না, তেমনই নোট সঙ্কটে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে গরিব, মধ্যবিত্তের। শহরে মানুষ কাজ হারাচ্ছে। গ্রামে কৃষকরা বীজ কিনতে পারছে না। রাহুল সেই উষ্মাটাই খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন। সেই সঙ্গে জনমনে এই সন্দেহ গেঁথে দিতে চাইছেন যে, নোট বাতিলের নেপথ্যে মোদীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি রয়েছে।
সেই ধাক্কা সামলাতে আজ মোদীর সঙ্গে পরামর্শ করে অনন্ত কুমার, বেঙ্কাইয়া নায়ডুরা গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন সংসদে। লোকসভায় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, ‘‘ভিভিআইপি কপ্টার দুর্নীতির মূল চক্রী ক্রিশ্চিয়ান মাইকেলের ডায়েরিতে ইউপিএ-র ‘প্রথম পরিবারকে’ ঘুষ দেওয়ার কথা লেখা আছে। তা নিয়েও আলোচনা হোক সংসদে।’’
যদিও এই অভিযোগকে আমল দিতে চায়নি কংগ্রেস। রণদীপ সুরজেওয়ালাদের বক্তব্য, নজর ঘোরানোর বৃথা চেষ্টা করছে বিজেপি। সব তদন্ত এজেন্সি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। কপ্টার কেনা নিয়ে উনি তদন্ত করুন না! কে বাধা দিয়েছে!
তবে এ সবের পরেও মূল প্রশ্নটা জিইয়ে রয়েছে। তা হ,ল মোদীর দুর্নীতি সম্পর্কে কী তথ্য রাহুলের কাছে রয়েছে? সূত্রের খবর, গত কাল সন্ধ্যায় ১৫, গুরুদ্বারা রেকাবগঞ্জ রোডে কংগ্রেসের ওয়ার রুমে দলের সাংসদদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাহুল। সেখানে প্রাক্তন মন্ত্রী শশী তারুর রাহুলকে ঠিক এই প্রশ্নটিই করেন। কিন্তু রাহুল তাঁকেও পরিষ্কার জানিয়ে দেন, যা বলার সংসদেই বলবেন। বৈঠকে রাহুল স্পষ্ট বলেন, কংগ্রেসের লক্ষ্য এখন একটাই। মোদীর ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া। নোট বাতিলের ফলে মানুষের হয়রানিকে সামনে রেখে গোটা দেশে মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার করতে হবে।
বীরাপ্পা মইলি রাহুলকে বলেন, নোট বাতিল নিয়ে কিছু মানুষ কিন্তু এখনও সরকারের প্রশংসা করছেন। ফলে কংগ্রেসেরও উচিত বুঝে চলা। রাহুল বলেন, ‘‘আমরা বুঝেই চলছি। সেই কারণেই পুরোপুরি বিরোধিতা জানাতে একটু সময় নিয়েছি। এখন যা দেখছি, পঞ্চাশ দিন কেন আগামী সাত-আট মাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। তার সুযোগ নিতে হবে কংগ্রেসকে। গ্রামেগঞ্জে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রচার বাড়িয়ে এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যাতে এ বার মোদীকেই বাতিল করেন মানুষ।’’
মোদীকে খোঁচা দিতে আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীর মন্তব্যও লুফে নেন রাহুল। সংসদে অচল থাকায় আডবাণী ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে জন্য টুইট বার্তায় তাঁকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে রাহুল কার্যত বলেন, বিজেপি-তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আডবাণীর পাশে আছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy