নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দের ‘রাষ্ট্রীয় একতা মঞ্চ’ থেকে তাঁকেই যে নিশানা করা হবে, তা জানা ছিল। সেটাই হয়েছে। সম্মেলনের উদ্যোক্তা জমিয়তের সভাপতি মৌলানা সৈয়দ আরশাদ মাদানি আগেই জানিয়েছিলেন, মোদী সরকারের নীতির ফলে দেশের মুসলমানরা আতঙ্কিত। তাঁদের জন্য দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই এই সম্মেলনের ডাক।
সেই অনুযায়ী আজ দিল্লিতে কানায় কানায় ভর্তি ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে মাদানি নিজে তো বটেই, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, সিপিএমের মহম্মদ সেলিমরা অসহিষ্ণুতা-সহ একাধিক প্রসঙ্গ টেনে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের সমালোচনা করতে গিয়ে আরএসএস-কে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন গুলাম। তা নিয়ে বিতর্কও হয়।
এই সম্মেলনে উর্দুতে সই করা বার্তা পাঠিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। কিন্তু রাজনৈতিক হিসেব কষে এই মঞ্চ এড়িয়ে গিয়েছেন রাহুল গাঁধী। সংখ্যালঘুদের মঞ্চ থেকে মোদীকে নিশানা করার সুযোগ থাকলেও তা ব্যবহার করতে চাননি তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন রাহুল এড়িয়ে গেলেন এই মঞ্চ? কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, মুসলমানদের পাশে থাকলেও এ নিয়ে কিছুটা সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছেন রাহুল তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের আশঙ্কা, সেটা না করলে বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণ করে তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে। তা কংগ্রেস হতে দিতে চায় না। বদলে মোদী সরকার তথা বিজেপিকে দলিত ও গরিব বিরোধীর তকমা দিতে চাইছে তারা। কংগ্রেসের যুক্তি, রোহিত ভেমুলা বা কানহাইয়া দলিত ও গরিব বলেই তারা নিপীড়িত হচ্ছে।
মুসলমানদের পাশাপাশি দলিত এবং গরিব প্রসঙ্গ টেনেছেন জমিয়তের প্রধান মাদানিও। তিনি বলেন, ‘‘জেএনইউ-তে কানহাইয়ার কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। কানহাইয়া জোর লড়াই করেছে। কিন্তু আমরা মুখ খুলিনি। কারণ তা হলেই একে হিন্দু-মুসলমানের লড়াইয়ের চেহারা দেওয়া হত!’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন বিজেপির নেতা-সাংসদরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষ উগরে দিচ্ছে। কারও মুখে লাগাম নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটা কথাও বলছেন না! কারণ এটাই তাঁর সরকারের নীতি।’’ রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যায় প্রধানমন্ত্রী ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ তুলে মাদানি বলেন, ‘‘এটাই কি সবকা সাথ, সবকা বিকাশ?’’ মাদানির অভিযোগ, নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই বিজেপি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য বদল করতে চাইছে।
এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের পাশে টানার চেষ্টা করেছেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘কার রান্নাঘরে কী রান্না হচ্ছে, তা না দেখে সরকারের উচিত, কার ঘরে রান্না হচ্ছে না, সে দিকে নজর দেওয়া!’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ওদের মুখে রাম নাম, মনে নাথুরাম!’’ আর কংগ্রেসের গুলাম নবি বলেন, ‘‘আমরা যে ভাবে আইএস-এর বিরোধিতা করি, একই ভাবে আরএসএসের বিরোধিতা করি।’’ এই মন্তব্যের নিন্দা করে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের দাবি, ক্ষমা চাইতে হবে গুলাম নবিকে। মাদানির অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের ভোটের দিকে তাকিয়েই অসহিষ্ণুতা ও হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। আমজনতাকে সজাগ করতেই তাঁদের এই সম্মেলন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy