টুইটারে জিন্দলের সেই ছবি।
আকস্মিকতার লাহৌর দৌত্যে পাক নীতিতে এক নতুন মোড় এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বড়দিনে নওয়াজ শরিফকে শুভেচ্ছা জানাতে কেবল নরেন্দ্র মোদীই লাহৌরে যাননি। একই দিনে শরিফের সঙ্গে দেখা করতে শিল্পপতি সজ্জন জিন্দলের লাহৌর যাত্রা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি মোদী-শরিফের এই আকস্মিক বৈঠকের নেপথ্যে ফের কোনও ভূমিকা পালন করেছেন এই ইস্পাত ব্যারন? কারণ, এর আগেও মোদী-শরিফ বৈঠকের পিছনে এই শিল্পপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিক বরখা দত্তের লেখা বইয়ে দাবি করা হয়েছিল, গত বছর নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্রনেতার গোপন বৈঠকের নেপথ্য কুশীলবও ছিলেন এই জিন্দল। পরে অবশ্য এই গোপন বৈঠকের কথা সরকারি ভাবে বিদেশ মন্ত্রক থেকে অস্বীকার করা হয়। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতে এসেও জিন্দলের চা-চক্রকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন শরিফ।
নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফের সঙ্গে জিন্দলের সুসম্পর্ক নিয়ে দিল্লির অলিন্দে কোনও সংশয় নেই। আর সে কারণেই গত কাল জিন্দলের লাহৌরে উপস্থিতি ও তার পরে দুই রাষ্ট্রনেতার আকস্মিক বৈঠক নিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন রাজনীতিকেরা। জিন্দল নিজেই টুইটারে নিজের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে অভিনন্দন জানাতেই লাহৌরে গিয়েছিলেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, ভারত-পাকিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় গোপন দৌত্য করার পিছনে জিন্দলের কি নিজস্ব বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে? আর তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তাঁর সেই বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্যই কি মোদী-শরিফের ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে?
আরও পড়ুন, মোদীর সফর জানা ছিল না সুষমারই
কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা আজ সরাসরিই বলেন, ‘‘সরকারের জবাব দেওয়া উচিত, কেন জাতীয় স্বার্থের চেয়ে এক জন শিল্পপতির বাণিজ্যিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?’’ সজ্জন জিন্দলের ভাই নবীন জিন্দল আবার কংগ্রেসেরই নেতা। কংগ্রেসের সাংসদও ছিলেন। সরকার অবশ্য মোদী-শরিফ বৈঠকের পিছনে জিন্দলের ভূমিকার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে। কিন্তু গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই জিন্দলদের বাণিজ্যিক স্বার্থ যে রয়েছে, সেটি কারও অজানা নয়। ২০১১ সালে আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে লৌহ-আকরিক খনিতে বিনিয়োগকারী ভারতীয় সংস্থায় অংশীদার জিন্দল গোষ্ঠী। ওই ক্ষেত্রে তাদের অন্য অংশীদার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেইল। আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই লৌহ আকরিকের চারটি ব্লকের মধ্যে তিনটিতেই প্রাধান্য দিয়েছেন ভারতীয় সংস্থাকে।
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। আফগানিস্তানে বরাত পেলেও প্রকল্পটি থমকে রয়েছে পাকিস্তানের জন্য। আফগানিস্তান থেকে লৌহ আকরিক সড়ক পথে করাচি এনে তার পর জাহাজের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে কোনও বন্দরে নিয়ে আসতে চান জিন্দল। কিন্তু পাকিস্তানের সহযোগিতা ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। পাকিস্তান সহযোগিতা না করলে ওই আকরিক রাশিয়া ঘুরে নিয়ে আসতে হবে। তাতে খরচও আরও বেড়ে যেতে পারে। আর সে কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া তরান্বিত করার পিছনে জিন্দলের স্বার্থ আছে বলে কংগ্রেস অভিযোগ তুলছে। আবার নওয়াজ শরিফের বাবাও এক সময়ে একটি ইস্পাত কারখানা তৈরি করেছিলেন। ঘটনাচক্রে যে কারখানার নাম ‘ইত্তেফাক’। সেই ব্যবসাও এখন ফুলেফঁপে উঠেছে। শরিফের ভাইপো ও ছেলে এখন সেই ব্যবসা সামলান। সেই সূত্রেও জিন্দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁদের। মোদী যখন পাক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে যান তখন শরিফের ছেলে ও ভাইপোও হাজির ছিলেন।
রাজধানীর অলিন্দে এখন গুঞ্জন, সজ্জন জিন্দল কি তাহলে নরেন্দ্র মোদীর আর কে মিশ্র হয়ে উঠছেন? অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সাংবাদিক আর কে মিশ্র ঠিক এ ভাবেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাক-চ্যানেল সমঝোতা করতেন। কার্গিল যুদ্ধের সময়েও পর্দার আড়ালে দৌত্যের জন্য বাজপেয়ী সরকার মিশ্রকে ব্যবহার করেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy