জালে: তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে শিশু খুনে অভিযুক্ত অশোক কুমার। গুরুগ্রামে শনিবার। পিটিআই
সাত বছরের ছোট্ট ছেলে প্রদ্যুম্নের খুনের প্রতিবাদে ফুঁসছে গুরুগ্রাম। আজ সকালে অভিভাবক আর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল চত্বর। প্রবল চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল নীরজা বাত্রাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলের সমস্ত নিরাপত্তা কর্মীকেও। আজই দিল্লিতে পাঁচ বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতার হয়েছে তার স্কুলেরই এক পিয়ন। অভিযোগ, ফাঁকা একটি ক্লাসরুমে তার উপরে অত্যাচার চালায় বিকাশ (৪০) নামে ওই ব্যক্তি।
গুরুগ্রামের স্কুলটির শৌচাগারে শুক্রবার সকালে উদ্ধার হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রদ্যুম্নর গলা কাটা দেহ। খুনের অভিযোগে গত কাল বিকেলেই গ্রেফতার করা হয় ওই স্কুলের এক বাসের খালাসি অশোক কুমারকে। পুলিশ প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রদ্যুন্মকে শৌচাগারে যৌন হেনস্থা করার চেষ্টা করেছিল অশোক। শিশুটি বাধা দিয়ে চিৎকার করায় ছুরি দিয়ে তার গলার নলি কেটে দেয় সে। জেরায় অশোক অপরাধ কবুল করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশ। কিন্তু এই তদন্তে সন্তুষ্ট নন প্রদ্যুম্নর মা-বাবা। শিশুটির মায়ের বক্তব্য, ‘‘যখন হাসপাতালে ওকে আনা হয় স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের মধ্যে কোনও হেলদোল ছিল না। ওঁকে জেলে দেওয়া হোক। আমি জানতে চাই, কী করা হয়েছিল আমার ছেলের সঙ্গে।’’ সিবিআই তদন্তের দাবিও করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে টিভির মুখ দেখে হাঁ
একই দাবি করেছেন আজ সকালে স্কুল চত্বরে জড়ো হওয়া অভিভাবকেরাও। তিনি সিবিআই তদন্তে রাজি কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রিপোর্ট পাওয়ার পরে যদি দেখা যায় যে সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, তা হলে যে কোনও তদন্তে আমরা প্রস্তুত।’’ অপরাধী যাতে দ্রুত ও কঠিন শাস্তি পায়, সরকার সে দিকে নজর রাখবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন খট্টর। আরও বলেছেন, ‘‘অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন অবিলম্বে রাজ্যের প্রতিটি স্কুল চত্বরের সিসিটিভি-সহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।’’
রায়ান ইন্টারন্যাশনালের মতো অভিজাত স্কুলে নিরাপত্তার এমন বিরাট গাফিলতি কী করে ঘটল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রথমত, স্কুলে নিয়োগের আগে অশিক্ষক কর্মীদের অতীত ইতিহাস খতিয়ে দেখা হতো কি? অভিযুক্ত ব্যক্তি ৮ মাস আগে এই স্কুলে কাজে লেগেছিল। এই ৮ মাসে তার আচরণ কেমন ছিল সেটাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রদ্যুম্নের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখার পরেও প্রিন্সিপ্যাল কেন উদাসীন ছিলেন? পড়ুয়াদের শৌচাগার স্কুলবাসের চালক ও খালাসিরা কেন ব্যবহার করতেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। আজ সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘‘বাসের খালাসি যে এই কাণ্ডে জড়িত, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। আরও কেউ এর মধ্যে রয়েছে কি না, সে দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
খট্টর আজ দিল্লিতে ছিলেন। তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে তাঁকে জানাতে হয়েছে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হবে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রামবিলাস শর্মার আশ্বাস, ‘‘অপরাধীকে ছাড়া হবে না।’’ প্রদ্যুম্নের বাড়ি যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে একের পর এক অঘটনে বিড়ম্বনায় কেন্দ্র। কী করে এমন ঘটনা ঘটল, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা জানতে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সিবিএসই। স্কুলের গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থার আশ্বাসও দিয়েছেন বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তা। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও আলাদা করে তদন্ত করছে। কী করে বাসের খালাসি-চালকরা পড়ুয়াদের শৌচাগারে ঢোকার অনুমতি পেত, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy