ডোকলামের সঙ্ঘাতকালীন মরসুমের সেই বাহুবলী বিদেশনীতি থেকে অনেকটাই সরে এখন মেরামতের কূটনীতির পথে হাঁটতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সেই বার্তা নিয়েই এসসিও (সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন)-র সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে আজ রাতে বেজিং পৌঁছলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সঙ্গে অদৃশ্য আমন্ত্রণের সিলবন্ধ খাম।
সেই আমন্ত্রণ আপাতত চিনের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য নয়। নয়াদিল্লি চাইছে, জুন মাসে চিনের কিংদাও প্রদেশে এসসিও সম্মেলনে মোদীর সফর যেমন রয়েছে, তা থাকুক। কিন্তু তার আগেই মে মাসে মোদীর একটি বেজিং সফরও হোক। যেখানে চিনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারবেন মোদী। এসসিও-র বহুপাক্ষিক ভিড়ের মঞ্চে দ্বিপাক্ষিক সংলাপের গুরুত্ব কিছুটা লঘু হয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। তা ছাড়া এসসিও সম্মেলনের নির্ঘণ্ট এতটাই আঁটোসাটো যে ভারত–চিনের পৃথক আলোচনার পরিসর তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া সমস্যার।
এখনও স্পষ্ট নয়, শেষ পর্যন্ত এই আয়োজন করে ওঠা সম্ভব হবে কিনা। কিন্তু মে এবং জুন— পরপর দু’মাসে মোদীর দু’বার চিন সফর যদি বাস্তবায়িত করা যায়, তবে তা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিতে এক অভিনব নজির গড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট, প্রতিবেশী প্রশ্নে কোণঠাসা ভারত এখন চিনের সঙ্গে তিক্ততার মাত্রা কমিয়ে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক উন্নত করার যথেষ্ট উদগ্রীব। নয়াদিল্লি কোনও ভাবেই চাইছে না যে, চিনের সঙ্গে ভারতের শত্রুতার সুযোগ নিয়ে এই উপমহাদেশে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিক ইসলামাবাদ। গত এক বছরে চিন-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। চিনা বাজারে ভারতীয় পণ্য রফতানি বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানোটাও মোদীর অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক একবারই হোক বা পরপর দু’মাসে দু’বার—ডোকলাম থেকে শুরু করে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে খোলা মনে আলোচনা করতে চায় নয়াদিল্লি। আজ থেকে শুরু হওয়া তাঁর দু’দিনের চিন সফরে এই বার্তাই সে দেশের নেতৃত্বকে দেবেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী। বছরের গোড়াতেই চিন নিয়ে কিছুটা নরম সুরে চলার সিদ্ধান্ত নেন মোদী। চালু করা হয়েছে নিয়মিত দৌত্য। নতুন বিদেশসচিব বিজয় গোখলে নিজে বেজিংয়ে যান। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও পাঠানো হয়। আগামী সপ্তাহে চিন সফরে যাবেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সম্প্রতি বেজিংয়ে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং সম্প্রসারণ-বিরোধিতা নিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। যেখানে প্রথম বার অভিজাত পরমাণু ক্লাব এনএসজি (পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থা)-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেজিংয়ের সঙ্গে। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, এত দিন এনএসজি প্রশ্নে নেতিবাচক ভূমিকা নেওয়া চিন কথা দিয়েছে যে ভারতের দাবি খতিয়ে দেখবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy