শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল। বুধবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
সমস্যার পাহাড় জমে রয়েছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, সেখানে ওষুধপত্র নেই। চিকিৎসকের বহু পদ শূন্য। নার্স নিযুক্তি বন্ধ অনেক দিন। ক্যাজুয়াল কর্মীদের উপর ভরসা করে চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ড। অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজের অধিকাংশ কর্মী সাধারণ মানুষের কথা শুনতে চান না। এ নিয়ে প্রায়ই বচসা হয়। গ্রামগঞ্জের গরিব মানুষ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে এসে অসহায় অবস্থায় পড়েন। ছিটেফোঁটা সরকারি ওষুধও মেলে না সেখানে। গ্লাভস, সূঁচ-সুতো থেকে যাবতীয় চিকিৎসা সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। বিশেষ করে, রক্ত নিয়ে ‘ব্যবসা’ চলে। আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হলেও রোগীদের প্রয়োজন মিটছে না। দালাল-চক্রের হাতে অতিরিক্ত টাকা দিলে অবস্য কোনও কিছুই দুর্লভ নয়। অন্যান্য কাজেও অনৈতিক ভাবে টাকা দাবি করা হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পরিদর্শনে গিয়ে আজ এ সব কথাই শুনলেন অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল। দেখলেন অপরিষ্কার শৌচাগার, বহু ওয়ার্ডে পাখা ঘোরে না। এ সব যে তাঁর অজানা নয়, নানা কথায় তা বুঝিয়ে দেন তিনি।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ শিল্পীরানি বর্মন, উপাধ্যক্ষ শেখর চক্রবর্তী, সুপার এএস বৈশ্যকে সঙ্গে নিয়ে মেডিসিন শাখার শৌচাগারের সামনে থমকে দাঁড়ান দিলীপবাবু। দুর্গন্ধে হাঁটাচলা দায়। শিশুবিভাগও অপরিচ্ছন্ন। নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটের অদূরে জঞ্জালস্তূপ। কর্তৃপক্ষ জানালেন, ও সব তাঁদের হাতে নেই। আগের সরকার ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিয়েছিল। অভিযোগ করতে হলে ঠিকা সংস্থাকেই করতে হয়।
প্রসূতি বিভাগে গিয়ে দিলীপবাবু দেখেন, শয্যার অভাব। রোগীরা মেঝেতে শুয়ে। ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। এ বারও জবাব মেলে— ৭০০ শয্যার পরিকাঠামোতে এখন ১ হাজার শয্যা রয়েছে। এত রোগী যে, চিকিৎসকদের হিমসিম হতে হয়। সরকারকে পরিকাঠামো বাড়ানোর জন্য বারবার বলেও লাভ হয়নি।
পরিদর্শনের আগেই অবশ্য কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পীরানি বর্মন ডেপুটি স্পিকারের হাতে দীর্ঘ এক দাবিপত্র তুলে দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, টাকার জন্য অনেক কাজ আটকে রয়েছে। গত অর্থবছরে রোগীদের জন্য ন্যূনতম ওষুধ কেনার টাকাটুকুও দেয়নি সরকার। যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় মেরামতিও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য জার্নাল, বইপত্র কেনা নিয়েও সঙ্কটে তাঁরা। কী কী এখনই নির্মাণ করতে হবে, সে সবেরও তালিকা পেশ করেন অধ্যক্ষ।
এমন দাবিপত্র পাওয়ায় রোগীদের নানা অভিযোগ সত্ত্বেও কৈফিয়ৎ তলবের রাস্তায় যাননি ডেপুটি স্পিকার দিলীপবাবু। বরং রোগীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টির উপর গুরুত্ব দেন তিনি। চিকিৎসককে অনেকেই যে ‘দ্বিতীয় ভগবান’ বলে মনে করেন, তাও শোনান বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের।
গগৈ সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘আগের কথা ভুলে যান। এখন টাকার সমস্যা হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে দ্রুত শিলচর মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনের জন্য অনুরোধ জানাব।’’
তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও উপায়ে এখানে উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।’’ আজ ছাত্রাবাসগুলিও ঘুরে দেখেন তিনি।
দিলীপবাবু পরে জানান, শিলচর মেডিক্যালে চিকিতসক-নার্সের প্রচণ্ড অভাব। সব বিভাগে কর্মীসঙ্কট। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রচণ্ড চাপের মুখে কাজ করতে হয়। অথচ রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সে দিকে গগৈ সরকারের কোনও খেয়াল ছিল না। তিনি শোনান, ওষুধপত্রের জন্য গত অর্থবছরে কোনও মঞ্জুরি ছিল না। অনেক দালানবাড়ি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এগুলি এখনই মেরামতি প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় তহবিল মঞ্জুরি এবং দালানবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কারের উপর গুরুত্ব দেন তিনি। সঙ্গে ঠিকা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ হাসপাতালে ভাল পরিষেবার জন্যও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলবেন বলে জানান। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে ভালো চিকিৎসা হলে মেডিক্যালে এত চাপ পড়তো না।’’
অধ্যক্ষ শিল্পী বর্মন ডেপুটি স্পিকারকে জানান, ‘মাদার চাইল্ড ইউনিটের’ জন্য দালানবাড়ি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। উপযুক্ত শয্যা-সরঞ্জাম পেলেই সেটি চালু করা যায়। দিলীপবাবু ফের আশ্বস্ত করেন, এখন আর অর্থের সমস্যা হবে না।
কিন্তু কত দিনের মধ্যে নতুন সরকার শিলচর মেডিক্যালে পরিবর্তন দেখাবে? ডেপুটি স্পিকারের জবাব, ‘‘২০১৮ সালে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুবর্ণ জয়ন্তী। তার আগেই পরিবর্তনের আঁচ টের পাবেন সবাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy