করিমগঞ্জ জেলা পরিষদকে ঘিরে জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে।
কুড়ি সদস্যের পরিষদের সভাধিনেত্রী তথা এআইইউডিএফ সদস্যা নজরানা বেগমকে সরাতে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন এক নির্দল ও ৯ কংগ্রেস সদস্য। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা পরিষদে সংখ্যালঘু (৭ সদস্য) এআইইউডিএফের নেই। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসই (১১ সদস্য)। বাকি দুই সদস্যের মধ্যে একজন নির্দল ও অন্যজন বিজেপি দলভুক্ত। সংখ্যালঘু সভাধিনেত্রীকে সরালে তাদের সম্পর্কে অন্য বার্তা যেতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই কংগ্রেস নেতৃত্ব নজরানাকে মেনে নিয়েছেন। বিশেষ করে রাজ্যে এখন সদ্য ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। একাধিক প্রতিষ্ঠান তারা নিজেদের দখলে নিয়ে আসছে। সেই কারণেই কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় কংগ্রেস। বিশেষ করে বছর খানেক পরেই যেখানে পরিষদের নির্বাচন, তখন তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কিন্তু নেতৃত্ব কী ভাবছে তা নিয়ে ভাবিত নন পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের সিংহভাগ। বরং তাঁরা ক্ষমতার গন্ধ পাচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সভাধিনেত্রী ইতিমধ্যেই পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের একাংশের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। কিন্তু তাতেও যে বিশেষ কাজ হয়নি তা বোঝা গিয়েছে এক এআইইউডিএফ বিধায়কের তৎপরতা দেখে। গত কাল রাতে দক্ষিণ করিমগঞ্জের এআইইউডিএফ বিধায়ক আব্দুল আজিজ খানের বাড়িতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন ১০ পরিষদ সদস্য। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিধায়কের ভাই (জেলা পরিষদ সদস্য) টুনু খান, পরেশ দাস, উপ-সভানেত্রী নির্মলা দাস, আবুবক্কর সিদ্দিকি, হিমাংশু দাস, অর্চনা মালাকার, কংগ্রেসের যমুনারানি সাহু, বিজেপি জেলা পরিষদ সদস্যার স্বামী রথীরঞ্জন দাস এবং কংগ্রেস জেলা পরিষদ সদস্যার স্বামী বদরুল হক। এই বৈঠকে তাঁরা ঠিক করেন, করিমগঞ্জ জেলা পরিষদ ভেঙ্গে ফেলা হবে। সভাধিনেত্রী আগামী কাল পরিষদের ২০ জন সদস্যকে নিয়ে যে সভা ডেকেছেন তারও নীতিগত বিরোধিতা করবেন তাঁরা। দু’-একজন সদস্য সভায় গরহাজিরও থাকবেন। এআইইউডিএফ বিধায়কের ভাই ছাড়াও পরিষদের উপ-সভাধিনেত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকায় বিষয়টি অনেকেই সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের মতে, রাজ্যের শাসক দল পরিষদ সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে প্রলোভিত করছে। মূল লক্ষ্য পরিষদ দখল করা।
ইতিমধ্যে হঠাৎই জেলা পরিষদের উপ-সভাধিনেত্রী নির্মলা দাস এবং কংগ্রেস জেলা পরিষদ সদস্য যমুনারানি সাহুর জন্য নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। জেলা পরিষদের এই দুই সদস্য নিরাপত্তারক্ষীর জন্য আবেদন না করতেই এই বিশেষ ব্যবস্থা পুলিশ নেওয়ায় সন্দেহ আরও গাঢ় হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জেলা কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পক্ষে কংগ্রেস নয়। সেটাই দলীয় সিদ্ধান্ত বলে জানান জেলা সভাপতি সতু রায় ও উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, শাসক দল বিজেপি এআইইউডিএফ ও কংগ্রেসের একাংশকে ভেঙে এনে জেলা পরিষদ দখল করতে চাইছে। কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ করিমগঞ্জ জেলা পরিষদের অনাস্থা প্রসঙ্গে বলেন, এআইইউডিএফের ব্যর্থতার গ্লানি কংগ্রেস বহন করবে না। তাই কংগ্রেস অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকবে। তবে প্রশ্ন, পরিষদের ১১ জন কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে ক’জন জেলা নেতৃত্বের কথা শুনবেন। অন্য দিকে, এআইইউডিএফ বিধায়ক আব্দুল আজিজ খান তাঁর বাড়ির বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নেবেন। তিনি বলেন, তার ভাইও একজন জেলা পরিষদ সদস্য। সে কারণেই হয়তো ওরা সবাই মিলে জটিলতা কাটানোর সূত্র খুঁজতে বসেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy